খবর৭১ঃ
কক্সবাজার শহরের লাইটহাউস পাহাড়ের পেছনে ফাতেরঘোনা এলাকা। এলাকাটি ছোট-বড় চারটি পাহাড় নিয়ে গড়া। সব কটি পাহাড়েই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। পাহাড় কেটে এসব ঘর তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরে যেতে বলা হলেও এসব ঘরের বাসিন্দারা তা কানেই তুলছে না।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ফাতেরঘোনায় গেলে কথা হয় একটি ঘরের বাসিন্দা ছমুদা খাতুনের (৫৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩০ হাজার টাকায় এক খণ্ড পাহাড়ি ভূমি কিনে তিনি একটি টিনের ঝুপড়িঘর তৈরি করেন। স্বামী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে সেখানে থাকছেন। পাহাড় ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং হলেও তিনি বাড়ি ছাড়তে নারাজ। কারণ বাড়ি ছাড়লে অন্য কেউ তা দখল করে নেবে।
ফাতেরঘোনার পাশে বৈদ্যঘোনা, মোহাজেরপাড়া, লাইটহাউস, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, পাহাড়তলী, খাজামঞ্জিল পাহাড়েও পাদদেশ ও ঢালুতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে লোকজন। টানা ভারী বর্ষণে এসব পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে কিছু ঘর হেলে পড়েছে।
বৈদ্যঘোনা পাহাড়ের ঢালুতে ঝুপড়িঘর তৈরি করে বসতি করছেন অনিল দত্ত। কিন্তু তিনিও পাহাড় ছাড়তে নারাজ। তাঁর ভাষ্য, ‘অনেক কষ্টে ঘরটি তৈরি করেছি। ঘরটি অন্যরা দখল করে নিলে তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে না।’ একই কথা বলেন বৈদ্যঘোনা পাহাড়ের বিবি হাজেরা। তিনি বলেন, বিভিন্ন পাহাড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা থাকলে পারলে তাঁরা কেন পারবেন না।
জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভার ১২ টির বেশি পাহাড়ে ভূমিধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। গত তিন দিন মাইকিং করেও লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ সরে আসেনি। বর্তমানে ১২টি পাহাড়ে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৮০ হাজার মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণে ভূমিধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে, তাই লোকজনকে পাহাড় ছাড়তে অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু কারও সাড়া মিলছে না। তারা নিজেরা সরে না এলে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।
২৪ গ্রাম প্লাবিতঃ
বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর দুই তীরে রামুর মিঠাছড়ি, চাকমারকুল, রাজারকুল, জোয়ারিয়ারনালা, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ১৩ গ্রাম এবং কক্সবাজার সদরের বাংলাবাজার, পিএমখালী, খরুলিয়া, নয়াপাড়া, মুক্তারকুল, চাঁন্দেরপাড়া, এসএমপাড়াসহ ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন বলেন, জেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ১ হাজার ৫৫৫ বান্ডিল ঢেউটিন ও ৪ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ হয়েছে।