বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং

0
3171
বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং

খবর৭১ঃ

বাচ্চার বমি হচ্ছে, বারবার বাথরুম যেতে হচ্ছে। আপনি ভাবছেন নিশ্চয়ই বাইরের খাবার খাওয়ার ফল কিন্তু জানলে আশ্চর্য হবেন, শুধুমাত্র রাস্তার খাবার খেলেই ফুড পয়জ়নিং হয়না।

সোজা বাংলায় বলতে গেলে ফুড পয়জনিংয়ের অর্থ হচ্ছে খাবার থেকে সংক্রমণ। ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা প্যারাসাইটযুক্ত (যেমন অ্যামিবা) খাবার খেলে ফুড পয়জনিংয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধরুন, ফ্রিজে বেশ কয়েকদিন ধরে একটা খাবার রাখা আছে। আপনি ভাবছেন খাবার ভালই থাকবে এবং না বুঝেই নিজে সেটা খেলেন বা বাচ্চাকে খাইয়ে দিলেন। তারপরই দেখলেন যে শরীর খারাপ লাগছে, বমি হচ্ছে। এই সবই কিন্তু ফুড পয়জনিংয়ের লক্ষণ। আসলে কোনও কোনও খাবারে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস গ্রো করতে পারে। সেই খাবার পেটে গেলে ইনফেকশন হয়, এবং তা থেকে ফুড পয়জনিং হতে পারে।

অনেকের ধারণা থাকে ক্যানড ফুডের কিছু প্রিজারভেটিভ থেকে ফুড পয়জনিংয়ের সমস্যা হতে পারে। এই ধারণা একেবারেই ভুল। তবে ক্যানড ফুডের মধ্যে যদি কোনও জীবাণু গ্রো করতে শুরু করে, তা হলে সেটা খেলে ফুড পয়জ়নিং হতেই পারে। তাই ক্যানড ফুড খাওয়ার আগে ঢাকনা ভাল করে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন, ওতে যেন কোনও নোংরা লেগে না থাকে।

 

বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং

সাধারণত কনট্যামিনেটেড খাবার খাওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফুড পয়জনিংয়ের উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তবে কোনও কোনও ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনে ১২ ঘন্টার মধ্যেও এই ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে। কিছু ব্যাক্টিরিয়া নিজেরাই টক্সিন তৈরি করে।

উপসর্গঃ

ফুড পয়জ়নিংয়ের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বারবার বমি হওয়া, পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, ডায়েরিয়া এবং অনেকসময় জ্বর। বেশিরকম ফুড পয়জ়নিং হলে কোনও খাবার পেটে থাকে না, সমস্ত বমি হয়ে বেরিয়ে যায়। বারবার বমি বা পটি হলে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কারণ যতটা পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ততটা খাওয়া সম্ভব হয় না। ডিহাড্রেশন হলে সারাদিন ক্লান্ত লাগে, কোনও কাজে উৎসাহ পাওয়া যায় না। মনে রাখবেন, ফুড পয়জ়নিং হলে কিন্তু এই সবক’টি লক্ষণ একসঙ্গে নাও দেখা যেতে পারে।

কোন খাবার এড়িয়ে চলবেনঃ

কাটা ফল বা সবজি অনেকক্ষণ খোলা পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফল, সবজি অনেকক্ষণ ভাল করে ধুয়ে তবেই বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিত। রাস্তায় আখের রস বা অন্য কোনও ফলের রস খেলে ফুড পয়জনিং হতে পারে। বাসি মিষ্টি বা বাসি ক্রিম-দেওয়া কেকও খাওয়া চলবে না। দুধ ও অন্যান্য ডেয়ারি প্রডাক্ট (যেমন দই, ছানা, চিজ়) থেকে অনেকসময় ফুড পয়জনিং হয়। দুধ ভাল করে না ফোটালে তার মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া থেকে যেতে পারে। আর একটা কথা। কাঁচা মাংস তুলনামুলকভাবে রান্না করা মাংসের থেকে বেশি নিরাপদ। যদি কাঁচা মাংস ভাল করে প্যাক করে ফ্রিজে রেখে দেন তা হলে অনেকদিন ভাল থাকতে পারে। রান্না করা মাংস কিন্তু

বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং

দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা যায় না, তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। কাঁকড়া, লবস্টার, শেলফিশ থেকে ফুড পয়জ়নিং হতে পারে। ক্যানড খাবার, ফ্রোজেন খাবার, বেকড খাবার, রেডি টু ইট ফুড যদি ঠিক করে ক্যান বা বেক করা না হয়, তা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়। বরফ থেকেও ইনফেকশন হতে পারে। অপরিষ্কার পানি দিয়ে বরফ তৈরি করলে, বা তাতে ময়লা হাত দিলে বরফ থেকেও এই সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মনে রাখবেন, যে কোনও খাবার থেকেই ফুড পয়জনিং হতে পারে, যদি ঠিকমতো হাইজিন মেনটেন করা না হয়।

চিকিৎসাঃ

প্রথমেই বলে রাখি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। সবসময়েই যে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে তা নয়। অনেকসময়েই ভাইরাল ইনফেকশন থেকে ফুড পয়জ়নিং হয়। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না। শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে ওআরএস দিতে হবে। এ ছাড়া বেশি বমি হলে বমির ওষুধও দেওয়া হয়। যদি কোনও কারণে স্টুলের সঙ্গে রক্ত বেরয়, তা হলে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে, কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত জ্বর বা প্রচন্ড পেটব্যথা হলেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে সাধারণত ৩-৫ দিনের মধ্যে এই অসুখ সেরে যায়। বাড়াবাড়ি হলে বড়জোর ৭-১০ দিন লাগতে পারে।

বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং
সতর্কতাঃ

খাবার যাতে কোনওভাবেই দূষিত না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুবই জরুরি। ভাল করে হাত না ধুয়ে খাওয়া একেবারেই অনুচিত। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে যেন তারা অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে হাত ধুয়ে তবেই কোনও খাবার খায়। রাস্তার খাবার বাচ্চাকে বেশি খেতে দেবেন না, বিশেষ করে যে খাবার দীর্ঘক্ষণ খোলা পড়ে আছে। সবসময় চেষ্টা করুন বাচ্চাকে ফ্রেশ, গরম-গরম খাবার খাওয়াতে। রান্না করার সময় বাসনপত্র, ছাঁকনি ইত্যাদি ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। খাবার স্টোর করার সময়ও সচেতন থাকতে হবে। সবসময় এয়ারটাইট কৌটোয় খাবার রাখবেন, যাতে কোনওরকম ইনটক্সিকেশনের সুযোগ না থাকে। ফ্রিজে বেশিদিন রান্না করা খাবার রাখবেন না। বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে ফেলবেন না। নির্দিষ্ট স্থানেই ফেলুন। পানি থেকে সংক্রমণ হওয়া খুব স্বাভাবিক। পানি ভাল করে না ফুটিয়ে কখনওই বাচ্চাকে খাওয়াবেন না। বড়দেরও ফিল্টার করা পানি খাওয়া উচিত।

বাচ্চাদের ফুড পয়জনিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here