হার না মানা আদিবাসী যুবক স্বপন বর্মন

0
1131

খবর৭১:
শেরপুর থেকে আবু হানিফ: 
প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গঁন আর পাহাড়ি ঢলে মানুষের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে যে গ্রাম তার নাম দুপুরিয়া। গ্রামটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায়। পাহাড়ী ঢলের কারণে ফসলী জমিতে বালুর চর জেগে জমি আর জমি নেই, যেন মরুভূমির বালুর চর। সে জন্যই গ্রামের মানুষগুলো নি:স্ব- অসহায়। তাদের মধ্যে প্রভাস চন্দ্র বর্মনের পরিবার একটি। তারই স্ত্রী পুস্পরানীর কোলে দুইজন ছেলে আর ২ জন মেয়ে আসে ঠিকই। পরিবারে প্রতিমহুর্তে আর্থিক অভাব-অনটন। আর অনেকদূরে স্কুল থাকার কারণে কোন সন্তানই লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা তেমন পায়নি। বড় ছেলে প্রাইমারীর গন্ডি পেরিয়ে কিছুদিন বাড়িতে থেকে, অন্নের সন্ধানে ঢাকায় চলে যায়। ছোট ছেলে কোনরকমে অস্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ে বাবার সাথে কৃষি শ্রমিক হিসাবে লেগে থাকে। চরম দারিদ্রের কষাঘাতে বাবা ও ছেলে ভাবতে থাকে এই অবস্থা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়? তাদের গ্রামের দুই গ্রাম পরে ধানশাইল গ্রাম। সে গ্রামেই মূলত প্রইিমারী ও হাই স্কুল। সেই প্রাইমারী স্কুলের কক্ষে একদিন হিউম্যান রাইটস্ ডিফেন্ডার (এইচ আরডি) ফোরামের মতবিনিময় সভা চলছিল। সে সভায় অন্যদের সাথে স্বপন বর্মনও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই স্বপন শুনতে পায় আইইডির বিভিন্ন দক্ষতাভিত্তিক কাজের কথা। আর তখন থেকে ভাবতে থাকেন কিভাবে সে সুযোগ কাজে লাগানো যায়। তারপর যখন সুযোগ আসে তখন সে আইইডি’র নির্ধারিত ফরম পূরণ করে দর্জির কাজ করতে চায়। আইইডি’র সুপারভাইজার হরেন্দ্র নাথ সিংহের সাথে পরামর্শ করে স্বপন বর্মণকে দর্জির কাজ শেখার অনুমতি দেওয়া হয়।
তারপর স্বপনকে ঝিনাইগাতী বাজারের তৃপ্তি টেইলার্স-এর স্বত্বাধিকারী তোতা মিয়ার তত্বাবধানে ২০১৮ সালের ১ জুলাই হতে কাজ শুরু করে।অদম্য ইচ্ছা আর নিজের দক্ষতার কারণে স্বপন বর্মণ অল্পদিনেই কাজ রপ্ত করে নেয়। স্বপনের কাজে মুগ্ধ হয়ে তোতা মিয়া তাকে তার নিজের দোকানেই মাসিক ৭০০০ (সাত হাজার ) টাকা বেতনে তাকে নিয়োগ প্রদান করে থাকেন। সেই টাকা হতে নিজের হাত খরচ চালিয়ে পরিবারকে সহায়তা করতে পারছে স্বপন।বর্তমানে স্বপনের পরিবারের সকল সদস্য স্বপনের এই কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট। স্বপনের ইচ্ছা একদিন সে এই রকম একটি দোকানের মালিক হবেন।
আইইডি’র আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের ফেলো সুমন্ত বর্মন জানান, স্বপনের মতো আরো অনেক আদিবাসী যুবক-যুবতী এখন কারিগরি ও দক্ষতামুলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেরা স্বাবলম্বি হচ্ছে এবং পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here