খবর৭১ঃ
মঈনুল হাসান রতন , হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ব্রীজগুলো দেখলে মনে হবে তৈরীর পর থেকে আজ পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। ব্রীজের স্লিপারগুলো নষ্ট হয়ে লাকড়িতে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো ব্রীজে স্লিপার ভেঙে পড়ে ফাঁকা হয়ে পড়েছে। নাটবল্টু না থাকায় খুলে পড়ছে স্লিপার। আবার অনেক স্থানে বাঁশ, রড দিয়ে স্লিপার আটকানো হয়েছে।হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় তিনটি উপজেলার উপর দিয়ে ৫২ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। তন্মধ্যে ছোট-বড় ৮৪ টি রেলব্রীজ। কোথাও বড় নদীর উপর আবার কোথাও খাল কিংবা ছড়ার উপর এসব ব্রীজ।সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় খোয়াই নদীর উপর রেলব্রীজ, লস্করপুর গ্রামের সম্মুখে রেলব্রীজ, উদয়ন আবাসিক এলাকা সংলগ্ন জিয়ার খালের উপর রেলব্রীজ, পশ্চিম বড়চর গ্রামের সম্মুখে একই খালের উপর রেল ব্রীজ, সুতাং নদীতে ব্রীজ, চাল্ল্যার বিলের উপর রেল ব্রীজ। মাধবপুর উপজেলায় শাহপুর রেল ব্রীজ, নোয়াপাড়া এলাকার রেল ব্রীজ, মনতলা ব্রীজ, ইটাখোল ব্রীজ। বাহুবল উপজেলায় ফর্দখলা গ্রামের সম্মুখে রেল ব্রীজ, রশিদপুর রেলস্টেশন এলাকায় পাহাড়ি ছড়ার উপর রেলব্রীজ।এছাড়াও নাম না জানা অনেক ব্রীজগুলো দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। মাঝে মধ্যে নামকাওয়াস্তে মেরামত হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে যেকোনো সময় ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, একজন রেলশ্রমিক (চাবিওয়ালা) নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সাত কিলোমিটার রেললাইন দেখভাল করার কথা রয়েছে। কিন্তু ১৫ দিনে এক বারও চাবিওয়ালাকে দেখা যায় ডিউটিতে।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- লক্কড়-ঝক্কড় রেললাইন ও ব্রীজে স্লিপার নেই, নেই নাট-বল্টু। ত্রুটিপূর্ণ এ লাইন ব্যবহার করেই বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন এ জেলার হাজার হাজার মানুষ।শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বড়চর গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, জিয়ার খালের উপর ব্রীজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মাঝে মধ্যে রেল লাইন সংস্কার হলেও রেল ব্রীজটি সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে যে কোনো দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মাখন মিয়া বলেন, পৌরসভাধীন ১নং ওয়ার্ডের ভিতরে ঢাকা-সিলেট রুটে দুইটি ব্রীজই নড়বড়ে। স্লিপারে বাঁশ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মানবাধিকার কাউন্সিল শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মঈনুল হাসান রতন বলেন, ঢাকা-সিলেট রেলপথে আমাদের জেলায় যে কয়টি ব্রীজ রয়েছে তন্মধ্যে অধিকাংশই ঝুকিপূর্ণ। বিশেষ করে সুতাং নদীর ব্রীজ, খোয়াই ব্রীজ, জিয়ার খালের ব্রীজ। এসব ব্রীজের উপর দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় কাঁপতে থাকে, যা ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি করে। শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশনের মাস্টার সাইফুল ইসলাম জানান, ব্রীজ নির্মাণ ও সংস্কার করার দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের। আমরা শুধু পরিবহন সেক্টর দেখি। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজের বিষয়টি জানা নেই বলেও জানালেন রেলের এই কর্মকর্তা।শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সাইফুল ইসলাম বলেন, ব্রীজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে ব্রীজে স্লিপারের পজিশন ঠিক রাখতে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যেগুলো বীজে স্লিপার নেই, নষ্ট হয়ে গেছে বা সরে গেছে যেসব ব্রীজে নতুন স্লিপার লাগানো শুরু হয়েছে।