খবর৭১ঃ প্রস্তাবিত বাজেটে তেল, চিনি, গুঁড়া দুধসহ ভোক্তাদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসাবে বিবেচিত সব দ্রব্যে ভ্যাট কমানো বা প্রত্যাহার হতে পারে। সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর যে বাড়তি করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটাও বাতিল হতে পারে।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভের উপর করও বাদ যাচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। আমদানির উপর পাঁচ শতাংশ গণ হারে কর প্রত্যাহার হতে পারে। ই-কমার্সের ভ্যাট প্রত্যাহার হতে পারে।
এসব সংশোধনী এনে রবিবার পাস হচ্ছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। শনিবার সংসদে উত্থাপন করা হয় অর্থবিল। নতুন অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে-আগাম কর, সঞ্চয়পত্রে বর্ধিত উৎসে কর ও মূলধনী যন্ত্রে অগ্রিম কর প্রত্যাহার।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর কর্মকর্তারা আশা করছেন, এসব পরিবর্তনে মধ্যবিত্ত ও ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন।
প্রত্যাহার হচ্ছে আগাম কর
মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর (আগাম ভ্যাট) আদায়ে ছাড়া দেওয়া হচ্ছে। মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানিসহ বেশ কিছু খাতে আমদানি পর্যায়ে আগাম কর দিতে হবে না।
নতুন ভ্যাট আইনে এবার অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাটের (এটিভি) পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ আগাম কর (এটি) বসানো হয়েছে। অর্থাৎ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ঢালাওভাবে পাঁচ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হবে।
এতে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পণ্যে এ আগাম কর বসেছে। ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে এই আগাম করের টাকা ফেরত নিতে হবে। এই টাকা ফেরত পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ব্যাংকের সুদ গুনতে হবে ঐ ব্যবসায়ীকে। ফলে আমদানি পর্যায়ে এসব যন্ত্রপাতি ও পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের উপর। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পাসের সময় তা পরিবর্তন করা হচ্ছে।
বাজেট ঘোষণার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা আগাম কর নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। তারা জানিয়েছেন, এতে পণ্যে বা সেবার মূল্য বাড়বে।
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বন্ড প্রতিষ্ঠানসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের পণ্যে আমদানির ক্ষেত্রে ৩০ জুন পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে মূসক বা ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর কাটা স্থগিত করা হয়েছে। এটির মেয়াদও বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে।
সঞ্চয়পত্রে বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার হচ্ছে
সঞ্চয়পত্রে বর্ধিত উৎসে কর ধার্যের প্রস্তাব দিয়ে এবার নিজ দলে সমালোচিত হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি এই কর পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করতে চাইলেও সেটি প্রত্যাহার হচ্ছে।
তবে এ নিয়ে এখনো দুটি চিন্তা রয়েছে। এর একটি হলো, সব ধরনের নাকি কেবল পরিবারভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের উপর তা প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বোনাস শেয়ার ও রিজার্ভের উপর কর প্রত্যাহার
তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভ ৫০ শতাংশের বেশি হলে ১৫ শতাংশ কর ধার্যের যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করেছিলেন, সেটিও বাদ যাচ্ছে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কর বহাল হলে কোম্পানির পুঁজি গঠনের পথ রুদ্ধ হবে।
রিজার্ভ মূলত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যবহার করে কোম্পানি। এই কর থাকলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। তাই এটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্টক ডিভিডেন্ডের বদলে ক্যাশ বা নগদ ডিভিডেন্ড প্রদানকে উৎসাহিত করতে কোনো কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড দিলে এ লভ্যাংশের উপরও ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব আছে।
ই-কমার্সের ভ্যাট
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যবসা) ও ভার্চুয়াল বিজনেস বা অনলাইনে পণ্যবেচাকেনাসহ বেশ কিছু খাতে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এ ভ্যাট হার কমানো হতে পারে।
গত ১৩ জুন পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ও অর্থবিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়।