খবর৭১ঃ
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। কারণ ব্যাংকে উচ্চহারে সুদ থাকলে শিল্পখাত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হবে না। বাজেটে খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যুগোপযোগী। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।
দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নের গতিধারা ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এবারের বাজেট জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে শনিবার প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতায় থেকে শুধু নিজেরা দুর্নীতি করেনি, দুর্নীতিকে সমাজে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান বা নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, অতীতের সকল সরকারের আমলের বাজেট ছিল বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর। উন্নয়ন বাজেটও ছিল বিদেশ নির্ভর। কিন্তু আমরা দক্ষতার সঙ্গে প্রতিবার বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছি বলেই এবারের বাজেটে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আর উন্নয়ন বাজেটও আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এর মাধ্যমে আমাদের আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মমর্যাদাশীলতা প্রমাণ করেছে। প্রতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও আমাদের অন্যতম সাফল্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের একটি ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এটাই আমাদের প্রত্যয় এবং এই বাজেট এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখবে।
দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নের গতিধারা ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এবারের বাজেট জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আরও বেড়েছে। গত নির্বাচনে এর প্রমাণ হয়েছে। চতুর্থবারের মতো দেশের মানুষের সেবা করার জন্য জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তিনি বলেন, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ- শিরোনামে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতি দেশের মানুষ পূর্ণ আস্থা জানিয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়েই এবারের বাজেটটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণেই দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আমরা ৫ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যখন একটি দেশের প্রবৃদ্ধি উচ্চহারে বৃদ্ধি পায়, মূল্যস্ফীতি নীচে থাকে- সেই অর্থনীতির সুফল দেশের সাধারণ মানুষ ভোগ করে থাকে। এ কারণে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন সমৃদ্ধ, বাজেটের জিডিপির ৫ ভাগ ঘাটতিও সহনীয়।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সমৃদ্ধির আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের- শিরোনামে এবার ৫ লাখ ২৩ লাখ ১৯০ কোটি টাকার সর্ববৃহৎ বাজেট দেয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে সারাদেশেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসাব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে ২০টি দেশ অবদান রাখছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। আগামী ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সংসদ নেতা বলেন, ওই সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলারে উন্নীত এবং অতি দরিদ্র্যের হার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানুষের গড় আয়ু ৬৫ থেকে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ থেকে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অতি দরিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে ১১ ভাগে নামিয়ে এনেছি, ৪৫ ভাগ দারিদ্র্যতাকে ২১ ভাগের নীচে নামিয়ে আনতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যের হার আগামীতে ১৬/১৭ ভাগে নামিয়ে আনবো। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের প্রত্যেক জনগণ উপকৃত হবে। শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হবে। কওমী মাদ্রাসাকে মূল শিক্ষার ধারায় ফিরে এনেছি। এরাও শিক্ষা শেষে দেশে-বিদেশে চাকরির পাবে। কারণ এরাও এ দেশেরই সন্তান।
সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে ভার ও দায়মুক্ত করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে শক্ত হাতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন এটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অপরাধ। স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারে, সেই টার্গেট থেকেই জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নিলেও তাঁর আদর্শ কেড়ে নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পথ ধরেই বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন জাতির মর্যাদায় উন্নীত করতে পেরেছি।