খবর ৭১ঃ
সুইস ব্যাংকে আসক্তি বেড়েছে বাংলাদেশিদের, যারফলে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাংক। প্রতি ফ্রাংক ৮৭ টাকা ধরে হিসাব করলে ২০১৮ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা; যেখানে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল চার হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। জমাকৃত এ টাকার পরিমাণ দেশের কমপক্ষে ১২ টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব গোপন রেখেছে- এমন বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থ এই হিসাবের মধ্য রাখা হয়নি। এছাড়া গচ্ছিত সোনা কিংবা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক হিসাবও বাইরে রাখা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বাড়ে। ২০১৭ সালে খানিকটা কমলেও ২০১৮ সালে এসে তা আবারো বেড়েছে।
সুইজারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সব কাজের নিয়ন্ত্রণ ও লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত এমন সব প্রতিষ্ঠানের তদারকি করে সুইস ফাইন্যানশিয়াল মার্কেট সুপারভাইজারি অথরিটি সংক্ষেপে এফআইএমএসএ ও সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের অধীনে যত ব্যাংক আছে তার সবকটিকে একসঙ্গে ‘সুইস ব্যাংক’ বলা হয়। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে ৩ শতাধিক ব্যাংক রয়েছে। গোপনে অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য অনেকেরই পছন্দ সুইজারল্যান্ড। গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে কঠোর দেশটির ব্যাংকিং খাত। যে কারণে অবৈধ আয় ও কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। তবে গত কয়েক বছরে বিষয়টি নিয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে ২০১৭ সালে এসে আমানত কমেছে সুইস ব্যাংকে। অর্থসম্পদ গচ্ছিত রাখার বিষয়ে গোপনীয়তা কমতে থাকায় অনেক ধনী এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য ঝুঁকছেন লুক্সেমবার্গ, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, বারমুডা, সিঙ্গাপুরের মতো দেশের দিকে। চলতি বছরেও সামগ্রিকভাবে সুইজার্যলান্ডে অর্থ জমার পরিমাণ কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশিদের জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এর আগে সুইজার্যলান্ডের ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের বিষয়ে কোনো তথ্যই প্রকাশ না করলেও গত কয়েক বছর ধরে দেশভিত্তিক আমানতের তথ্য প্রকাশ করছে দেশটি। সুইস ব্যাংকগুলোয় যেসব বাংলাদেশি অর্থ জমা রেখেছেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলে তাদের পরিচয় জানতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব সোজা উত্তর হচ্ছে- না। কারণ সুইজারল্যান্ডের সংবিধান ও ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গোপনীয়তার অধিকার সুইস আইনব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং ফেডারেল সংবিধান দ্বারা তা সুরক্ষিত। তবে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে এ সুরক্ষা কাজ করবে না। অর্থাৎ সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশে কোনো বাধা থাকবে না। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশে বাধ্য। সে অপরাধ সুইজারল্যান্ডেই হোক বা অন্য কোনো দেশেই হোক।