খবর৭১ঃ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে ফিরে গেলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
এই ‘বয়স্কদের’ ধারণা, তাদেরকে বয়সের কারণে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনার পেছনের কারিগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রিজভী। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নামা ১৩ নেতাকে ছাত্রদল থেকে যে বহিষ্কার করা হয়েছে, তার পেছনেও বিএনপি নেতার হাতই দেখছেন বিক্ষুব্ধরা।
বিক্ষুব্ধরা আরো জানাচ্ছেন, আপত্তি নিয়ে তারা কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে। স্কাইপে কথোপকথনে তিনি তাদের বক্তব্য শুনে ঈদের পর সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ঈদের আগেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে কমিটি। নতুন কমিটি করতে যে সার্চ কমিটি করা হয়েছে, তাদের বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীদেরকে বলেছেন, কমিটি ভেঙে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তারা জানেন না।
মূলত মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিতে রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি পেয়েই ক্ষুব্ধ হয় ছাত্রদলের বিক্ষুদ্ধরা। ঈদের পর ১১ জুন নয়াপল্টনে বিক্ষোভ শুরু করে তারা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঝুলানো হয় তালা। রিজভীকে কার্যালয় ছাড়া করতে বিচ্ছিন্ন করা হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।
ছাত্রদলের আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে এই বিজ্ঞপ্তির পেছনেও আছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
ঢাকার একটি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রুহুল কবির রিজভী আমাদের বড় ভাই। তার উপর ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের কমিটি নিয়ে তার অযাচিত হস্তক্ষেপ আমাদের আন্দোলনে যেতে বাধ্য করেছে।’
আন্দোলনরত একজন ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘যেখানে তারেক রহমান আমাদের ঈদের পর সিদ্ধান্ত জানাবেন বললেন, সেখানে ঈদের একদিন আগে হুট করে রাতের আঁধারে কীভাবে কমিটি বাতিল করা হলো? কী এমন ঘটছিল দেশে? আমরা জেনেছি, রিজভী আহমেদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে এটা করেছেন।’
তবে রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘আমার নিজের থেকে কিছু করার কোনো ক্ষমতা নেই। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে আমি ঘোষণা করেছি মাত্র।’
তবে এমনটা মানতে নারাজ ছাত্রদলের নেতারা। তারা বলেন, যখন কমিটি বাতিল নিয়ে এমন হইচই হচ্ছে তখন তারেক রহমান নিজে বা তার বার্তাবাহক মাফরত জানাতে পারতেন এটা তার নির্দেশে হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গত কমিটির একজন সহ-সভাপতি বলেন, ‘যেদিন আমাদের কর্মসূচি শুরু করি সেদিন গুলশানে সার্চ কমিটির নেতারা আমাদের ডেকে কথা বলেন। সেখানে শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আসাদুজ্জামান রিপন ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী দাবি করেছেন কমিটি ভাঙার প্রেস রিলিজের বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। তাহলে কী দাঁড়াল বুঝে নেন।’
ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই নেতা রুহুল কবির রিজভী ও আমান উল্লাহ আমান গ্রুপের মধ্যে কমিটি নিয়ে মনস্বাস্তিক লড়াইয়ের তথ্য আছে। আর আন্দোলনে আমান সমর্থকদের বেশি সক্রিয় দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে দলের দপ্তরে থাকা রিজভীকে কোণঠাসা করতে চান তারা। এজন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের করার চেষ্টা করা হয়।
অন্যদিকে রিজভী গ্রুপের লোকজন চাচ্ছে নতুন কমিটিতে তাদের পছন্দের নেতাদের সামনে আনতে। অভিযোগ আছে, রিজভীরা চাইছেন, ছাত্রদলের সামনের কমিটির শীর্ষ পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কমিটির সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানকে আনতে চান। এজন্য ২০০০ সাল উল্লেখ করে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ধরা হয়েছে।
রিজভী আবার অসুস্থ। তবে এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, আন্দোলনের কথা শুনে অসুস্থতার ‘নাটক’ করেছেন তিনি। কারণ অসুস্থ হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে মিছিল করেছেন রিজভী।
এদিকে আন্দোলনে থাকা ছাত্রদল নেতারা ছয়মাসের জন্য স্বল্প মেয়াদি কমিটি দেয়ার দাবি করেছেন শনিবার। অন্যথায় আবার আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি এসেছে। এর মধ্যেই রাতে ১২ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। পরের দিন ঘোষণা করা হয় কাউন্সিলের তারিখ। যা নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ শুরু হয়েছে ছাত্রদলে।
এক দুই দিনের মধ্যে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার কথা জনিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।