খবর ৭১ঃ কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে টানেল। সার্বিক কাজের এখনো পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ে আমরা কাজ শেষ করতে পারবো।
সেগমেন্ট গুলো আসছে ধীরে ধীরে। আনোয়ারা প্রান্তে বৈদ্যুতিক লাইন ও সাবস্টেশন নির্মাণকাজ চলছে। পতেঙ্গা অংশে যে রোড বানানো হচ্ছে সেটার কাজও চলমান।
এছাড়া প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৩৮১ একরের অধিকাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। সব জমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু জমি অধিগ্রহণ বাকি আছে, যেগুলা খুব দ্রুত অধিগ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের মূল কাজের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর কাজের গতি অনেকটাই বেড়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ৩.৩২ কিলোমিটার টানেল নির্মান হবে। এটির সর্বোমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও সেতু বিভাগ।
এই প্রকল্পে চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। এবং বাকি টাকা অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। ঘোষণা দেয়া হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ শেষে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হবে।
নকশা অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা প্রান্তের নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে টানেলটি আনোয়ারা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) এলাকায় গিয়ে শেষ হবে। টানেলে দুটি টিউব থাকবে। প্রতিটি টিউবের প্রস্থ হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার। এ ছাড়া উভয় প্রান্তে ৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন আউটার রিং রোডের সঙ্গে টানেলটি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২০০৮ সালে লালদিঘীর ময়দানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে টানেল নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) সঙ্গে চুক্তি সই হয়। চীন সরকার ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে জিটুজি ভিত্তিতে (সরকার টু সরকার) টানেল নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন করে।
চীনের সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ এর আদলে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নেয়া হয়, টানেল নির্মাণ তার একটি ধাপ। ‘কন্সট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ প্রকল্পের আওতায় এটি নির্মিত হচ্ছে।
এই টানেলটি চট্টগ্রাম নগরকে কর্ণফুলী নদীর অন্য প্রান্তের সাথে সরাসরি যুক্ত করবে। যার ভলে নদীর দুই প্রান্তে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। অপরদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে সারাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এবং কক্সবাজারের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার কমে যাবে। ভবিষ্যতে এশিয়ান হাইওয়ের সাথেও এটি সংযুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ টানেল নির্মাণের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে, কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম শহরকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে। একভাগে রয়েছে নগর ও বন্দর এবং অপরভাগে রয়েছে ভারী শিল্প এলাকা। কর্ণফুলী নদীর ওপর ইতোমধ্যে তিনটি সেতু নির্মিত হয়েছে, যা বিরাজমান প্রচুর পরিমাণ যানবাহনের জন্য যথেষ্ট নয়। নদীর মরফলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমা একটি বড় সমস্যা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারীতার জন্য বড় হুমকি। এই পলি জমা সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর আর কোন সেতু নির্মাণ না করে এর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার চট্টগ্রাম জেলার দুই অংশকে সংযুক্ত করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।