ঈদের আগে ৪২ বস্তা চাল উদ্ধারঃ সৈয়দপুরে ভিজিএফের চাল বিতরণে নয় ছয়ের অভিযোগ,থানায় মামলা

0
461

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী), খবর ৭১ঃ

গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সৈয়দপুরের কয়েক ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে। বিশেষ করে উপজেলার কামারপুকুর ও বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে অনিয়মের অভিযোগ সর্বাধিক। এ দুই ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ ৪২ বস্তা ভিজিএফ’র চাল জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঙ্গালীপুর ইউপি থেকে ১৭ বস্তা এবং কামারপুকুর ইউপি থেকে ২৫ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে বিতরণের সঙ্গে জড়িত ওয়ার্ড সদস্যরা চালের পরিমাণ এবং স্লিপ বিতরণে কারসাজি করে নিজেরা হস্তগত করেছে চাল। এদিকে জব্দ করা ৪২ বস্তা চাল উদ্ধারের ঘটনায় থানায় ২টি মামলা ও একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বাঙালিপুর ইউপির চাল উদ্ধারের ঘটনায় ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য রাশেদা বেগম এবং কামারপুকুর ইউপির ঘটনায় জড়িত রাব্বেল নামের এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দুই ইউনিয়নে সরকারি চাল উদ্ধারের ঘটনায় এলাকার দুস্থরা অভিযোগে জানান, তাদের বরাদ্দ চালের পরিমাণে নয়ছয় করা হয়েছে। প্রতিজন দুস্থকে ১৫ কেজি করে চাল দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।

দুস্থদের নামে কার্ড ইস্যু করলেও তাদের না দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা চাল আত্মসাৎ করেছেন। চাল উদ্ধারের ঘটনা দুর্নীতির প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। জানা যায়, গত ঈদ উপলক্ষে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে ১৫ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল বিরতণ করা হয়। গত ২ জুন বাঙালিপুর ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণ চলছিল। এ সময় গোপন সূত্রে সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে ওয়ার্ড সদস্য রাশেদা বেগমের ব্রাহ্মণপাড়াস্থ বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে তার বাড়ি থেকে ৩০ কেজি পরিমাণের ১৭টি বস্তায় ৫১০ কেজি চাল উদ্ধার করেন। পরে চাল উদ্ধারের ঘটনায় ওই ওয়ার্ড সদস্যকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দেয়া হয়।

মামলাটি দায়ের করেন ট্যাগ অফিসার ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপজেলা ফিল্ড অফিসার সাদেকীন আলম। এর আগের দিন কামারপুকুর ইউনিয়নে বিতরণের জন্য বরাদ্দ একই পরিমাণ ওজনের ৭ বস্তায় ২১০ কেজি ভিজিএফের চাল উদ্ধার করা হয়। এ চাল উদ্ধার হয় দলুয়া মুন্সিপাড়াস্থ রব্বেল নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। মামলাটি করেছেন ওই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সহিদুল আলম। এছাড়া গত ৩ জুন কামারপুকুর বাজার থেকে মালিকবিহীন ১৮ বস্তা চাল উদ্ধার করে এলাকাবাসী। পরে জব্দ চাল থানায় সোপর্দ করা হয়। চাল উদ্ধারের ঘটনায় কামারপুকুর ইউপির সচিব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে কয়েকদিন আগে জব্দকৃত চাল থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। থানা থেকে চাল ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন ইউপি সচিব মোখছেদুল ইসলাম। এ ব্যাপারে শুক্রবার রাতে জানতে চাইলে থানার উপ-পরিদর্শক মো. আরমান আলী বলেন, পুলিশী তদন্তে জব্দকৃত চাল ভিজিএফ’র নয় বলে প্রতিয়মান হওয়ায় চালগুলো মালিককে দেয়া হয়েছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে দুস্থদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে কামারপুকুর ইউনিয়নে তা মানা হয়নি।

ওইদিন ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সহিদুল আলম উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়ে মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন চাল বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি। অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি অনুপস্থিতির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিলাম। পরে কাজে বাইরে যাই। ওই ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা যায় দুস্থদের চাল শিশুরা উত্তোলন করছে। সেদিন রাকিব নামে ১২/১৩ বছর বয়সের এক শিশুকে চাল তোলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সে জানায়, স্লিপ প্রতি ২০/৩০ টাকা পাই। এ পর্যন্ত ৭/৮ বার চাউল উত্তোলন করেছে বলে জানায় সে। তার মতো অনেকেই এভাবে চাল উত্তোলন করছে বলে জানায় ওই শিশু। এসব চালের স্লিপ কে দিচ্ছে জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে চাল উত্তোলনস্থলে গিয়ে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদের এক কর্মচারী মাস্টার রোলে উত্তোলনকারীদের টিপসহি নিচ্ছেন।

এক্ষেত্রে কোন নিয়ম না মেনে মাস্টার রোলে নামের পাশে একই ব্যক্তি একাধিকবার টিপসহি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি। এদিকে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজাহান পাশা জানান, থানায় মামলা দায়ের হলেও সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়গুলো অভিযোগের তদন্ত করবে দুদক। তদন্তের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here