খবর ৭১ঃ
বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জয় করেছেন বাংলাদেশের আর্চার রোমান সানা। সঙ্গে ২০২০ অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতাও অর্জন করেছেন দেশ সেরা এই আর্চার। গতকাল দেশে ফিরে তাঁর সাফল্যের স্বীকৃতি হয়ে থাকল মাত্র ২ লাখ টাকা।
গত রোববার রাতে নেদারল্যান্ডসে কী দারুণ কীর্তিটাই না গড়েছেন আর্চার রোমান সানা! বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ব্রোঞ্জ। এটি কেবল একটি পদক নয়, অনেক বড় কিছু। এটি বৈশ্বিক কোনো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম পদক। শুধু তা-ই নয়, এই সাফল্য রোমানকে এনে দিয়েছে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ। বিশ্বের ৯২টি দেশের ২০৬ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলেই পদকটি জিতেছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রোমানকে আমরা কী দিচ্ছি!
দেশে ফিরতেই রোমানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ২ লাখ টাকার চেক। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে আর কি! যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তাঁকে। সেই সঙ্গে ছিলেন আট-দশটি ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সাহেদ রেজাও ছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্তই। রোমানের জন্য মেলেনি কোনো আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ-সুবিধার আশ্বাস।
বিওএ মহাসচিব অবশ্য বলেছেন, ‘সিটি গ্রুপ তো আছেই।’ হ্যাঁ, সিটি গ্রুপ আর্চারির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে। ‘তীর: গো ফর গোল্ড’ কর্মসূচি নিয়ে যারা ৫ বছরের জন্য আর্চারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সেটিরই ফল রোমানের এই অভাবনীয় সাফল্য। এটা আর্চারি ফেডারেশনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি। কিন্তু যে খেলোয়াড়টি বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক পদক ও অলিম্পিকে সরাসরি অংশগ্রহণের ছাড়পত্র উপহার দিল, তাঁর জন্য বিশেষ কিছু থাকবে না? বিওএ মহাসচিব রোমানকে একটা ‘আশ্বাস’ দিয়েছে—এগিয়ে চলার পথে ‘পাশে’ থাকার। ২ লাখ টাকার আর্থিক পুরস্কারটিও সিটি গ্রুপেরই দেওয়া।
রোমান অবশ্য ২ লাখ টাকা পেয়ে খুশি, ‘আমি গরিব ঘর থেকে এসেছি। আমার সব সময়ই টাকাপয়সার সহযোগিতা লাগে। সিটি গ্রুপের এই ২ লাখ টাকা আমার পরিবারের কাজে লাগবে।’ খুলনার ২৪ বছর বয়সী তরুণ রোমান চাকরি করেন বাংলাদেশ আনসারে।
রোমানের কল্যাণে আগামী অলিম্পিকে শুধুই অংশগ্রহণ করার জন্য যাবে না বাংলাদেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরে ব্যক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্টে রোমান নামবেন দেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে। নড়েচড়ে বসতেই হবে সবাইকে। কিন্তু অলিম্পিকে যাওয়ার আগে প্রস্তুতিটা তো ভালো হতে হবে। রোমান অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন অলিম্পিকে তিনি যাবেন প্রস্তুত হয়েই, ‘একজন খেলোয়াড়ের বড় স্বপ্ন থাকে অলিম্পিকে পদক জেতার। এ জন্য আগের চেয়ে বেশি পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আর অলিম্পিকে পদক জিততে ওই জায়গায় যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। অলিম্পিকের আগে যে কয়টা প্রতিযোগিতা আছে, সেগুলোতে অংশ নিতে পারলে আশা করছি অলিম্পিকে পদক জেতা সম্ভব।’
রোমানের এই সাফল্যের পেছনে বড় অবদান আছে জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখের। মার্টিন ফ্রেডরিখ ২০১৭ সালের জুনে দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্চারদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। গতকাল রোমানের পাশে দাঁড়িয়ে শুনিয়েছেন আশার কথা, ‘রোমানের সাফল্যে বেশ ভালো লাগছে। সামনে যেতে হলে আমাদের আরও প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে। তাহলে অনেক কিছু শেখা যাবে। এ ছাড়া অন্য প্রতিযোগীদের সামনেও সুযোগ থাকবে অলিম্পিকে কোটা প্লেসে সুযোগ করে নেওয়ার।’ কিন্তু সেই সুযোগ পেতে খেলোয়াড়দের দরকার আরও পৃষ্ঠপোষকতা।