ফেসবুক হ্যাক হলে দ্রুত পুলিশকে জানান

0
740

খবর ৭১ঃ গভীর রাত পর্যন্ত ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিলেন আয়ান ওয়াসিম (ছদ্মনাম)। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে আর ঢুঁ মারা হয়নি। দ্রুত বেরিয়ে পড়েছেন অফিসের উদ্দেশ্যে। পথেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ফোন পেলেন, ‘মাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিস?’ আয়ান অবাক, ‘মাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি মানে?’ বন্ধুর জবাব, ‘তোর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেই তো জানলাম, মা হাসপাতালে দ্রুত কিছু টাকা প্রয়োজন, সঙ্গে একটা বিকাশ নম্বরও দিয়েছিস।’

আয়ানের আর বুঝতে বাকি রইল না। তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই বন্ধুকে নিজের অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দেওয়ালেন আয়ান, ‘বন্ধুরা, আয়ানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড। ওই বিকাশ নম্বরে কেউ টাকা পাঠাবে না।’

আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন প্রায় দুই কোটি। তাই এখানে নানা কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে প্রতারক চক্র। প্রতারকেরা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিয়ে তা ফেরত দেওয়ার কথা বলে টাকাও দাবি করে থাকে। কখনো কখনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেই অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপরাধমূলক কিছু পোস্ট করে, যা আপনাকে বিপদ ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে দেয়। অনেকে এর শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি কী করবেন?

অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠাবেন। কীভাবে বার্তা পাঠানো যায়, সেই অপশনগুলো ফেসবুকেই পাবেন। সাধারণত ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাকাউন্ট ফেরত দেয় না। তাদের কাছে কিছু তথ্যপ্রমাণ পাঠাতে হয়। ওরা সেগুলো নিয়ে খতিয়ে দেখবে, আপনার দাবি সঠিক কি না। আর সেই সময়ের মধ্যেই কিন্তু প্রতারক চক্র আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা পোস্ট করে। তাই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা হলো পুলিশকে জানানো। দ্রুত আপনি কাছের থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। এই জিডি আপনাকে যেকোনো ঝামেলা এড়াতে আইনি সুরক্ষা দেবে।

জিডি করার পরে আপনি সরাসরি কথা বলতে পারেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অধীনে থাকা সাইবার ক্রাইম ইউনিটের নম্বরে (০১৭৬৯৬৯১৫২২)। শুধু ফেসবুক হ্যাকড নয়, অনলাইনে যেকোনো ধরনের অপরাধ বা প্রতারণার শিকার হলে এই ইউনিটকে আপনি সরাসরি জানাতে পারেন। জানাতে পারেন তাদের ফেসবুক পেজেও (https://www.facebook.com/ciccidbdpolice)। তবে সবচেয়ে ভালো হয় আপনি সরাসরি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দপ্তরে গেলে। সেখানে আপনার সমস্যা শুনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে হ্যাকড হওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। না হলে নির্ধারিত ফরমে আপনার বিস্তারিত অভিযোগ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবেন তাঁরা।

কিছুদিন আগে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়ায় সাইবার ক্রাইম ইউনিটে গিয়ে আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ডিএমপির সদর দপ্তরের পঞ্চম ফ্লোরে এই ইউনিট। আগেই তাদের কথামতো জিডি করেছিলাম। সেটা বের করে দেখাতেই দায়িত্বরত দুই কর্মকর্তা আন্তরিকতার সঙ্গে আমার কথা শুনলেন। তাঁদের একজন সার্চ করে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বের করলেন। ততক্ষণে আমার অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পরিবর্তন করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। দু-একটি বাদে আমার সব ছবি-পোস্ট মুছে দিয়েছে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর ওই কর্মকর্তা নির্ধারিত ফরম দিয়ে আমাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বললেন। দিলাম। তিনি জানালেন, ফোনে যোগাযোগ করা হবে। ওই দিনই আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফেরত পেয়েছিলাম।

তবে কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম থানায় জিডি করতে গিয়ে। আদাবার থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে জানালাম, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে জিডি করব। তিনি আমাকে কিছু প্রশ্ন করলেন, এরপর বললেন, আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এখনো তো কেউ কোনো অপরাধ করেনি, তাহলে কেন জিডি করবেন? আমি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের বরাত দিলাম। সঙ্গে এটাও বললাম, জিডি করার আগেই যদি ওই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হয়, সেই দায় তো আমার কাঁধে পড়বে। ডিউটি অফিসারের সঙ্গে আরও কিছু কথা হলো। আমার মনে হলো, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে, শুধু এটা উল্লেখ জিডি নেওয়া যাবে কি না, সেটা নিয়ে তিনি সন্দিহান। এরই মধ্যে ওসি সাহেব ওই কক্ষে এলেন। তিনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে মর্মে জিডি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন।

এ বিষয়ে আমাদের পুলিশ প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া জরুরি। যে দেশে দুই কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে, সেখানে থানা-পুলিশকে অনলাইন অপরাধ সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া প্রত্যাশিত। যেখানে অনলাইনে হয়রানি বা অপরাধের শিকার মানুষ সহজেই থানায় গিয়ে তাদের অভিযোগ জানাতে পারে। প্রয়োজনে থানাতেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকার পেতে পারে। সেটাই প্রত্যাশিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here