মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলে সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। রাত ১০টার ট্রেন পরদিন সকালে এবং সকালের ট্রেন রাতে চলাচল করছে। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে এ অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে রেলপথে চলাচল করা আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন । এ রেলপথে সবচেয়ে বেশি সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে নীলফামারীর চিলাহাটি – ঢাকা রেলপথে চলাচল করা আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এটি প্রায় ১০ ঘন্টা বিলম্বে সাপ্তাহিক যাত্রা বিরতির দিন গতকাল (রবিবার) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্য সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। অথচ ট্রেনটি গত শনিবার (১৫ জুন) রাত ১০ টা ২৭ মিনিটে সৈয়দপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা। এমন সিডিউল বিপর্যয়ে বর্তমানে দিনের ট্রেন রাতে, সন্ধ্যার ট্রেন ভোর বেলা এবং রাতের ট্রেন পরদিন সকাল বেলায় যাতায়াত করছে। সৈয়দপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, চিলাহাটি- ঢাকা রুটে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি গত শনিবার (১৫ জুন) ঢাকা থেকে ছেড়ে বিকেল সাড়ে ৪ টায় সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু সেটি নির্ধারিত সময়ের ১০ ঘন্টা বিলম্বে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে গতকাল রবিবার ভোর ৪টা ৫০মিনিটে। আর গন্তব্য চিলাহাটি থেকে ফিরে ওই দিন অর্থাৎ গতকাল রবিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে যায়। যদিও রবিবার আন্তঃনগর ওই ট্রেনটির সাপ্তাহিক যাত্রা বিরতি থাকা কথা। আর ঢাকা থেকে আজ সোমবার ট্রেনটির যাত্রা বিরতির নির্ধারিত দিন।
ফলে ওই আন্তঃনগর ট্রেনের ঢাকাগামী যাত্রীরা সৈয়দপুর স্টেশনে গত শনিবার রাত ১০টার পর থেকে গতকাল রবিবার সকাল পর্যন্ত ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকেন। সৈয়দপুর শহরের যাত্রীরা ট্রেনের বিলম্বের খবর জানতে পেরে নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে চলে যান। তবে দূর দূরান্ত থেকে আসা ট্রেন যাত্রীরা সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে অথবা শহরের আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়ে রাত্রীযাপন করতে বাধ্য হন। এমন একজন যাত্রী হলেন নীলফামারী জেলা সদরের চাপড়া সরমজানী ইউনিয়নের লতিফচাপড়ার মো. মশিউর রহমান (৩২)। গতকাল রবিবার সকালে তাঁর সঙ্গে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে কথা হয়। তিনি জানান, ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৬ জুন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক কষ্ট করে ১৫ জুনের টিকিট সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর যথারীতি তিনি ট্রেন ধরার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েও আসেন। কিন্তু সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর পর জানতে পারেন ট্রেন বিলম্ব হবে। রাত তখন প্রায় ১০টা বাজে। এখন কি করবেন ভেবেচিন্তে কুলকিনারা করতে পারছিলেন না তিনি। অনেকটা নিরুপায় হয়ে নির্ঘুমে সারা রাত স্টেশন প্লাটফর্মে কাটিয়ে দেন। অবশেশে গতকাল রবিবার সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে তিনি নীলসাগর ট্রেনে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এছাড়াও ট্রেনযাত্রী সৈয়দপুর সাতপাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. ওয়াহেদ আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে ঢাকা ইডেন কলেজে পড়েন। ঈদের ছুটি শেষে মেয়েকে ঢাকায় পাঠানো জন্য স্টেশনের টিকিট কালোবাজারি কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুন মূল্যে টিকিট গ্রহন করেন মেয়ের জন্য। শনিবার মেয়েকে আন্তঃনগর নীলসাগর ট্রেনে তুলে দিতে রাতে যথাসময়ে সৈয়দপুর স্টেশনে পৌঁছেন। কিন্তু স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেন বিলম্ব হবে। অবশেষে স্টেশনের সংশ্লিষ্টদের কাছে অনেক ধর্ণা দিয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে রাতে পুনরায় বাড়িতে ফিরে যান। তিনি আরো জানান, বাড়িতে গিয়ে মেয়ে ঘুমালেও তিনি জেগে ছিলেন। কারণ স্টেশন থেকে বলা হয়েছিল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে নীলসাগর ট্রেনটি সৈয়দপুর স্টেশনে আসবে। তাই টেনশনে আর ঘুমায়নি। সকাল সাড়ে ৫টায় মেয়েকে নিয়ে আবারও স্টেশনে আসি।
একই ভাবে চিলাহাটি থেকে খুলনা ও রাজশাহীগামী আন্তঃনগর রূপসা,সীমান্ত,বরেন্দ্র,তিতুমীর ট্রেনগুলোও প্রায় ৫/৬ ঘন্টা বিলম্বে চলাচল করছে।
সৈয়দপুর স্টেশন মাস্টার শওকত আলী জানান, শনিবার রাত ১০টা ২৭ মিনিটে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল। কিন্তু ট্রেনটি প্রায় ১২ ঘন্টা বিলম্বে আজ রবিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এ নিয়ে কথা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় চীফ সিগন্যাল এন্ড টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ঢাকা-চিলাহাটি রেলপথের বেশকিছু স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে যথাসময়ে ক্রসিং করনো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক স্টেশনে দীর্ঘ সময় যাত্রা বিরতি দিয়ে দুটি ট্রেনের ক্রসিং করতে হচ্ছে। ফলে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। তাছাড়া ঢাকা- চিলাহাটি রেলপথে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন আরো একটি থাকলে হয়তো এ সমস্যা হতো না বলে জানান।