অবশেষে মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি ডাক্তাররা

0
444

খবর৭১ঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতি চলার পর অবশেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জির সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। সেক্ষেত্রে নতুন কিছু শর্তও চাপালেন তারা। জানালেন বন্ধ ঘরে কোন বৈঠক নয়, তা হবে ক্যামেরার সামনে।

রবিবার কলকাতার নীল রতন সরকার (এনআরএস) মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের জেনারেল বডির বৈঠকের পর তাদের একটি প্রতিনিধ দল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্য হাসপাতালের আন্দোলনরত ডাক্তাররাও।
তারা জানান, রবিবার আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনটি বিভ্রান্তমূলক ছিল এবং সেটা মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি করেছে। যা আমরা কাটাতে চাই।

’ আমরা চাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসতে। কিন্তু বন্ধ দরজার পিছনে নয়, সেটা সকলের স্বার্থে হোক এবং প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে।
মুখ্যমন্ত্রী কোথায় আলোচনায় বসবেন সেটা জনস্বার্থে আমরা ওনার ওপরেই ছেড়ে দিলাম। উনি আমাদের স্থান বলে দিন। আমরা রাজি, কিন্তু তাতে যেন সারা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মেডিকেল কলেজের পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিনিধি ও জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জায়গা দেওয়া যায়। ’

‘আমরা আশাবাদী যে মুখ্যমন্ত্রী জনস্বার্থে এই আলোচনা সভার আয়োজন করবেন। এবং আমাদের সকল ন্যায্য দাবিকে মান্যতা দেবেন যাতে আমরা অবিলম্বে জনসাধারণের জন্য পরিষেবা চালু করতে পারি। ’

যদিও চিকিৎসকদের নতুন এই শর্ত নিয়ে সরকারের তরফে এখনও কোন মন্তব্য করা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুন রাতে কলকাতার নীল রতন সরকার (এনআরএস) মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে রোগীর পরিবারের বিরুদ্ধে। হামলায় পরিবহ মুখার্জি এবং যশ তখওয়ানি নামে দুই জুনিয়র চিকিৎসক মারাত্মকভাবে আহত হন। ওই ঘটনার পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দাবিতে ১১ জুন থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কিন্তু ১৩ তারিখ এসএসকেএম হাসপাতালে এসে আন্দোলনরত ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেওয়ার পরই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। কর্মবিরতি তুলে নিতে ডাক্তারদের সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি। কাজে যোগ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন তিনি। মমতা অভিযোগ করেন, বহিরাগতরাই গন্ডগোল পাকাচ্ছে। কার্যত এরপর থেকেই গোটা রাজ্যের পাশাপাশি দেশজুড়ে এর আঁচ পড়ে। গত প্রায় ছয়দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলির ইমারজেন্সি, প্যাথলজিক্যাল, বহির্বিভাগ-এ অচলাবস্থা চলছে। প্রভাব পড়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক চিকিৎসক গণইস্তফা দিয়েছেন। তাদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন একদিনের প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন দিল্লির এইমস হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। আগামীকাল ১৭ জুন দেশজুড়ে হাসপাতালে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন। উদ্বেগ প্রকাশ করে মমতা ব্যনার্জিকে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন।

এমন অবস্থায় শুক্রবার নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে বৈঠকের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরে বৈঠকের দিন পরিবর্তন করে করা হয় শনিবার। কিন্তু সেদিনও জুনিয়র ডাক্তারদের কোন প্রতিনিধিই মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেননি। যদিও অচলাবস্থা কাটাতে একদিকে যেমন সরকারের তরফে লাগাতার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তেমনি সিনিয়র ডাক্তাররা এমনকি আসরে নেমে পড়েন রাজ্যটির রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠিও।

শনিবারই নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজের সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, তাদের সব দাবিই মেনে নিতে রাজি, কিন্তু রোগীদের স্বার্থে অবিলম্বে তাদের কাজে যোগ দিতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে রবিবার আন্দোলনরত ডাক্তারদের পক্ষ থেকে আলোচনা চেয়ে এই বার্তা। এদিকে রবিবার বিকালে ডাক্তারদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার আবেদন জানালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কলকাতায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষ বলেন, রোগীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে চিকিৎসকদের বলবো কর্মবিরতি তুলে নিন। ’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here