খবর ৭১ঃ আজকাল অধিকাংশ পার্সোনাল কম্পিউটারই যেখানে ৪ জিবি (গিগা বাইট) র্যামের, সেখানে মাত্র আট কেবি (কিলো বাইট) র্যামের যন্ত্রটির এমন দাম শুনে চমকে ওঠারই কথা। আসলে এই দাম এখন স্রেফ ঐতিহাসিক মূল্য।
সম্প্রতি নিলামে বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে চার দশক আগে বাজারে ছাড়া অ্যাপল-এর প্রথম পিসি বা পার্সোনাল কম্পিউটারগুলির একটি। দাম উঠেছে চার লাখ ৭১ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার কোটি ৩৫ হাজার টাকা।
এখন তো কম্পিউটার আমাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু ৫০ বছর আগে টেবিলে রাখা একটি ব্যক্তিগত কম্পিউটারের কথাও ভাবতে পারা যেত না। সেইসময় কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো কিছু গবেষণাগার এবং বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটা বড় বড় অফিসে। মাপে সেই যন্ত্রগুলো ছিল বিশাল। বড় বড় আলমারির সমান।
কিন্তু কম্পিউটারকে ছোট করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার ভাবনাটি বাস্তবায়িত হয় ১৯৭৫ সালে, যখন পৃথিবীর প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার ‘এমটিআইএস অল্টেয়ার ৮৮০০’ বাজারে আসে। এরপর ১৯৭৬ সালে অ্যাপল-এর ‘অ্যাপল ১’ বাজারে আসে।
অ্যাপল ১ বাজারে নিয়ে আসেন আমেরিকার দুই বন্ধু। দুজনের নামই স্টিভ। তাঁদের একজন পরবর্তীতে কিংবদন্তি হয়ে ওঠা স্টিভ জোবস। অন্যজন স্টিভ ওজনিয়াক। বাজারে আনা মডেলটি মূলত ওজনিয়াকের তৈরি। জোবস সেটি বাজারে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন। এই কাজে, সাইকেল নিয়ে সেই সময় তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন রাস্তায় রাস্তায়। মোট ২০০টি অ্যাপেল ১ কম্পিউটার সেট তখন বাজারে এসেছিল। এক একটির দাম ছিল ৬৬৬.৬৬ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ হাজার টাকা)।
ওই পিসিগুলোর স্পেসিফিকেশন ছিল মাপে এবং দেখতে একটি ব্রিফকেসের মতো। এটি এমওএস প্রসেসর দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে ছিল ৬৫০২ মাইক্রোপ্রসেসর এবং র্যাম আট কেবি। ওই সময় এই পিসিতে বেসিক কিছু কাজ, প্রোগ্রাম ডেভলপিং এবং গেম খেলা যেত।
এই কম্পিউটার বিক্রির জন্য স্টিভ জোবস একটি বিজ্ঞাপনও লেখেন। বিজ্ঞাপনটি ছিল এ রকম, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ মাইক্রো কম্পিউটার সিস্টেম, যেটি সিঙ্গেল পিসি বোর্ড দিয়ে তৈরি। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সিস্টেম যেটি সমস্ত কিছুর জন্য ব্যবহার করা যাবে, প্রোগ্রাম ডেভলপিং থেকে শুরু করে গেম খেলা কিংবা বেসিক কাজ- সবটাই করবে এই কম্পিউটার।
যেহেতু এই পিসিটি সম্পূর্ণভাবে পরীক্ষিত এবং নিরীক্ষিত, এ ছাড়া এর নিজস্ব পাওয়ার সাপ্লাই রয়েছে, এ কারণে এই কম্পিউটারটি চালানো খুবই সহজ এবং ঝঞ্ঝাটহীন। ‘
গত ২৩ মে ‘ক্রিস্টিস’-এর অনলাইন নিলামে সেই ‘অ্যাপল ১’-এরই একটি বিক্রি হলো বাংলাদেশি মুদ্রায় চার কোটি ৩৫ হাজার টাকায়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
