খবর ৭১: ২০০৬ এর শেষ দিকে অভিষেক হওয়া সাকিব এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। ২০০৭ এ যখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন তখন সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার হাতেখড়ি হয়েছে। তবে অল্প দিনের মাথায় বিশ্বে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমনী বার্তা। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের মাত্র আড়াই বছরের মাথায় বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডারের মুকুটটি পরে বসেন সদম্ভে।
সেই যে এক নম্বর আসনে বসেছেন, এরপর ওঠা-নামা হলেও বলা যায় দীর্ঘদিন ধরে সেই রাজত্বের দাবিদার সাকিব একাই। দুই একবার শীর্ষ স্থান হারালেও অল্প দিনের মাথায় আবার ঠিকই ছিনিয়ে নিয়েছেন। যেন রাজা ফিরেছেন সিংহাসনে।
২০১১ সালে নিজের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আসার আগেই জানান দেন তিনি কতটা কার্যকরী। ব্যাট-বলে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে থাকেন। নিজের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে এক নম্বর অবস্থানে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দেন সেবার। ২০১৫ বিশ্বকাপেও তাই। এর মাঝে একবার দুইয়ে নেমে আসলেও বিশ্বকাপের অনেক আগেই আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের এক নম্বর অলরাউন্ডারের জায়গাটি পুনরুদ্ধার করে নিয়েছিলেন।
তবে মনে হচ্ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপটা এক নম্বরে থেকে আর শুরু করা হবে না তার। ইনজুরির কারণে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারেননি। তাতে র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে চলে আসার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিলেন আফগানিস্তানের রশিদ খান। আফগান তারকার কাছে ওয়ানডের শীর্ষ স্থান হারালেও বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে তা ফিরে পান টাইগার সহ-অধিনায়ক সাকিব। ২২ মে প্রকাশিত আইসিসির নতুন র্যাংকিংয়ে রশিদ খানকে পেছনে ফেলে আবার শীর্ষস্থান দখল করে বসেন। এরই মধ্য দিয়ে রেকর্ড বুকে নতুন একটি রেকর্ড স্থাপন করতে যাচ্ছেন এই বাঁহাতি।
প্রথম কোনো অলরাউন্ডার হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপ র্যাংকিংয়ের শীর্ষ অবস্থানে থেকে খেলতে যাচ্ছেন সাকিব। এর আগে কোনো ক্রিকেটারই এমন কীর্তিতে নাম লেখাতে পারেননি।
বিজ্ঞাপন
তিন বিশ্বকাপ মিলে সাকিব খেলেছেন ২১টি ম্যাচ। তাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও উইকেট শিকারি উভয়ই নাম্বার ওয়ান নিজেই। বিশ্বকাপের ২১ ম্যাচে নিয়েছেন ২৩ উইকেট আর ব্যাট হাতে করেছেন ৫৪০ রান।
মজার বিষয় হচ্ছে বিগত বিশ্বকাপগুলোতে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে সাকিবের আশেপাশে যারা ছিলেন তারা কেউই পরেরবার সে জায়গায় থাকতে পারেনি। শীর্ষ তালিকায় কেবল টিকে আছেন সাকিবই। ২০১১ বিশ্বকাপে সাকিবের শক্ত প্রতিপক্ষ ছিলেন যুবরাজ সিং, শেন ওয়াটসন, জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন, ড্যানিয়েল ভেটোরি এবং আব্দুর রাজ্জাকের। ২০১৫ আসরে প্রতিযোগী বদলে সাকিবের আশে পাশে ছিলেন তিলকারত্নে দিলশান, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, মোহাম্মদ হাফিজ এবং জেমস ফকনার এর মতো খেলোয়াড়রা। অথচ তাদের বেশিরভাগই অবসর নিয়েছেন, এই বিশ্বকাপে খেলবেন কেবল হাফিজ আর ম্যাথিউস। তবে এই আসরে তারা সাকিবের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে র্যাংকিং এবং পারফরম্যান্সের বিচারে।
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে সাকিবের থেকে খানিকটা এগিয়ে ছিলেন আফগানিস্তানের তরুণ সেনসেশন রশিদ খান। ত্রিদেশীয় সিরিজে তিন ইনিংস খেলে ১৪০ করার পাশাপাশি বোলিংয়ে দুই উইকেট শিকার করেন সাকিব। এই সিরিজে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের ওপর ভর করে রশিদ খানের থেকে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে যান টাইগার তারকা। বর্তমানে সাকিবের রেটিং পয়েন্ট ৩৫৯ আর রশিদের ৩৩৯ পয়েন্ট। ৩১৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন আরেক আফগান স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী।
তাই বলা যায়, র্যাংকিংয়ে থাকা খেলোয়াড়রা পরিবর্তন হয়েছেন সবাই, কেবল সাকিবই একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন প্রায় এক যুগ ধরে। টানা তিন বিশ্বকাপে সেরার মুকুট মাথায় নিয়ে নামাটা চাট্টিখানি কথা নয়, তাই ভক্তদের আশাও যেন আকাশচুম্বী মাগুরার সন্তানকে ঘীরে। এখন দেখার পালা সেই আশার চাপ সামলে কতটা জ্বলে উঠতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ।