মানিকগঞ্জের রওশনারা এখন যুক্তরাজ্যের মেয়র

0
543

খবর৭১ঃমানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর (কাঠাল বাগান) গ্রামে প্রকৌশলী রজ্জব আলীর মেয়ে রওশনারা রহমান (দুলন)। তবে ১৩ বছর বয়সে প্রকৌশলী বাবার সঙ্গে চলে যান যুক্তরাজ্যে।

সেই রওশনারা রহমান (দুলন) যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। চলতি বছরের ১৪ মে নির্বাচনে বিপুল ভোটে রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

এর আগে ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন রওশনারা রহমান। সামান্য ভোটে সে সময় পরাজিত হন তিনি। এর আগে লেবারপার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

১৯৬৭ সালে তার বয়স যখন ১৩ তখন প্রকৌশলী বাবার সঙ্গে পারি জমান যুক্তরাজ্যে। প্রবাসে জীবন যাপন করলেও নিজের জন্মভূমির জন্য মন কাঁদে।

জন্মভূমির মানুষের কাছে দায়বদ্ধতার জন্যই প্রায় প্রতি বছরই ছুটে আছেন নাড়ির টানে নিজের জন্মস্থান সিংগাইরের উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর (কাঁঠাল বাগান) গ্রামে।

গ্রামের মানুষজনের জন্য কিছু করার তাগিদে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

রওশনারা ছিলেন মেধাবী ছাত্রী। যখন তিনি ইরতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে তখন বৃত্তিও পেয়েছিলেন।

স্থানীয় তালেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর বাবা প্রকৌশলী রজ্জব আলীর সঙ্গে চলে যান যুক্তরাজ্যে। সেই থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যে।

যুক্তরাজ্যেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন রওশনারা। তিনি সেখানে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি স্বামী ব্যবসায়ী রেজাউর রহমানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরেন হোটেল ব্যবসায়। এরপর রাজনীতির ভুবনে। রওশনারার স্বামীর বাড়ি বাংলাদেশের পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়।

রওশনারার বাবা ছিলেন বুয়েটের প্রথম ব্যাচের একজন প্রকৌশলী। দুই মাস আগে মারা গেছেন বাবা প্রকৌশলী রজ্জব আলী খান। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রওশনারা সবার বড়।

১৯৬৭ সালে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান রজ্জব আলী খান। এলাকায় একজন দানবীর ব্যক্তি হিসাবে তার খ্যাতি ছিল। তিনি নিজের জমিতে এলাকাবাসীর জন্য মসজিদ, ঈদগাঁ মাঠ, রাস্তা এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন। সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন।

রওশনারাও এলাকায় দরিদ্র মানুষের পাশে যুক্ত হয়ে পরেন। যুক্তরাজ্যের রামসগেট শহরের নামে নিজ গ্রামে রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সুদূর প্রবাসে থেকেও যার মাধ্যমে তিনি এলাকার মানুষকে নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন।

রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ম্যানেজার ও রওশানার চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেব হোসেন জানান, সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশে প্রতিবছর বন্যার সময় ত্রান, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেন। এছাড়া ব্যক্তিগত খরচে এলাকার অনেক মানুষের চোখের অপারেশন করিয়েছেন রৌওশনারা রহমান।

মোতালেব হোসেন জানান, রওশনারা রহমানের পেশা ব্যবসা। রামসগেট শহরে ‘তন্দরি’নামে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক তিনি। যুক্তরাজ্যে সক্রিয় রাজনীতি ও ব্যবসায় নানা ব্যস্ত থাকলেও, রওশনারা প্রতিবছরই দেশে আসেন। সময় কাটান নিজ গ্রামে। তার মানবিক কাজের কারণে এলাকার সবাই তাকে অনেক ভালোবাসেন।

তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন রওশনারা রহমান। সামান্য ভোটে সেসময় পরাজিত হন তিনি। এর আগে লেবারপার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মের নির্বাচনে বিপুল ভোটে যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হন রৌওশনারা।

রওশনারার এই সাফল্যে উৎফুল্ল সিংগাইরের মানুষ। স্থানীয় তালেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রমজান আলী জানান, আমাদের এলাকার গর্ব রৌওশনারা যুক্তরাজ্যের রামসগেইট শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এজন্য আমরা সবাই খুবই উচ্ছ্বসিত। তারা সবাই তার জন্য দোয়া করছেন।

রওশনারা রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। লেবার পার্টি আমার প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছিল। এজন্যই আমাকে মনোনয়ন দেয়। শহরের মেয়র নির্বাচিত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এটা খুবই সম্মানের। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভবিষৎতে মানুষের জন্য আরও কাজ করে যেতে চাই।

তিনি বলেন, নিজের শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য খুবই জরুরি। শত ব্যস্ততার মাঝেও আমি সবসময় আমার দেশ এবং জন্মস্থানকে মনে করি। এজন্যই সুযোগ পেলেই দেশে ফিরে যাই। গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমারও ভালো লাগে।

উল্লেখ্য, দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে রওশনারা রহমান প্রায় এক যুগ আগে একটি রিকশা নিয়ে গিয়েছিলেন লন্ডনে। সেময় বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলেছিল। যা বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও প্রচারিত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here