খবর৭১ঃ কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই মুহূর্তে ধান কিনে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ সরকারের নেই। গুদাম সঙ্কটই এ সমস্যার প্রধানতম কারণ। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার গভীরভাবে চিন্তা করছে। দুয়েকজন ভাবাবেগে ধানে আগুন দিয়েছে। সারা দেশে সেভাবে দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ধানের দাম নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তা দ্রুতই সমাধান করা হবে। কৃষিতে আধুনিকীকরণ বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। তিনি কৃষকদের কিছুটা ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানান এবং তাদের ধৈর্য্য ও সহযোগিতা কামনা করেন।
শনিবার রাজধানীর আইডিইবি মিলনায়তনে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (বিসিজেএফ) আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন: কৃষিখাতের চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলেও এটি সমাধানের জন্য আমরা চিন্তা করছি। ধানের দাম বাড়ানোর ইমিডিয়েট সমাধান হচ্ছে, যদি ধান রফতানিতে যাই। কিন্তু বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। যদি বন্যা হয়ে আবার আমন নষ্ট হয়ে যায়? সে ব্যাপারেও আমাদেরকে সচেতন থাকতে হচ্ছে। তবে রফতানিতে যাওয়ার চেষ্টা করবো। সেটা হারভেস্ট (উৎপাদন) হয়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, কৃষককে বেশি দাম দেয়ার আরেক সমাধান হচ্ছে চাষীর কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে নেয়া। কিন্তু গুদাম ব্যবস্থা একটা সমস্যা। বাংলাদেশে গুদামে ধারণক্ষমতা ২০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু গুদামে বর্তমানে গতবারের ৮-১০ লাখ টন চাল রয়ে গেছে। গমও আছে। ফলে ১০-১২ লাখ টন কেনা যাবে। কিন্তু ধানের উৎপাদন আছে সাড়ে ৩ কোটি টন। তাই ১০-১২ লাখ টন কিনলে সাড়ে তিন কোটিতে কী প্রভাব পড়বে?
তিনি এ সময় এই কেনা নিয়ে ব্যবস্থাপনাগত বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বলেন, এতে প্রকৃত কৃষকের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আরেকটি দিক আছে। তা হচ্ছে, কোরিয়া-জাপানের মত কৃষকের সব ধান কিনে নেয়া। কিন্তু সেটা করার আগে আমাদেরকে আরও গুদাম তৈরি করতে হবে।
ড. রাজ্জাক বলেন, আরেকটি দিক হচ্ছে মিল মালিকেরা ধান কিনতে পারেন কিন্তু তাদের কেনা গতবছরের আমন চাল সবটা তারা এখনও বিক্রি করতে পারেনি। কাজেই সার্বিকভাবে পরিস্থিতিটা হঠাৎ করেই খুব জটিল হয়েছে। তবে এর জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এরা কৃষিবান্ধব সরকার। নানা প্রণোদনা দেয়ার ফলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। এটা (দাম কমে যাওয়া) খারাপ দিক না। ফ্রান্সের মত দেশেও চাষী ড্রামে করে দুধ রাস্তায় ফেলে দেয়। টমেটো মহাসড়কে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, আমরা তো চাই খাবারের দাম কম থাকুক। এখন অনেক ধান হয়ে। সেটা আমাদের সামনে একটা বিড়ম্বনা। যেই বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছে, সেই দেশে এখন উদ্বৃত্ত উৎপাদন। মানুষ ধানে আগুন দিয়েছে। দুয়েকজন ভাবাবেগে দিয়ে। সারাদেশে এভাবে দিচ্ছে না। আমি মনে করি, মানুষ দায়িত্বশীল। তাদের নিজের ধান নিজেই পুড়িয়ে ফেলবে, এটা কোনোদিনই হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, আইডিইবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুর রহমান বক্তব্য রাখেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাওসার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক নুরুল ইসলাম, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, বিসিজেএফের প্রচার সম্পাদক প্রসূন আশীষ।