খুশকি কমানোর ঘরোয়া উপায়

0
651

খবর৭১ঃ পার্টিতে বা কোনও অনুষ্ঠানে যাবেন বলে সেই পছন্দের কালো শাড়িটা পরেছেন। বেরোনোর আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা একবার ব্রাশ করে নিলেই রেডি! যেই না চিরুনি দিয়েছেন, অমনি পোশাকে, কাঁধে, ঘাড়ে সাদা-সাদা, গুঁড়ো-গুঁড়ো কীসব পরে সাজটাই মাটি করে দিল! লোকজনের সামনে যেতেও অস্বস্তি। সবাই যেন আপনার মাথার দিকেই দেখছে। কি? টেলিভিশনের কোনও অ্যাডের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে? হ্যা খুশকি। খুবই কমন সমস্যা। আর এই কমন সমস্যার জন্য রইল কিছু সহজ এবং ঘরোয়া সমাধান।

খুশকি কীঃ
আমাদের ত্বকের মত স্ক্যাল্পের কোশও অনবরত তৈরি হয়। স্ক্যাল্পে নতুন কোশ তৈরি হলে পুরানো কোশ ঝরে যায়। কারোর ক্ষেত্রে পুরানো কোশ ঝরে যাওয়ার আগেই নতুন কোশ তৈরি হয়ে যায় অর্থাত্ এই সেল রিনিউ হওয়ার পদ্ধতি খুবই দ্রুত ঘটে। তাই পুরানো কোশ র্নিজীব, সাদা গুঁড়োর মত স্ক্যাল্পে থেকে যায়। একেই খুশকি বলা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত স্ক্যাল্পে খুব ইচিং হয়। এর সঙ্গেই অনেকের ক্ষেত্রে স্ক্যাল্প লালচে হয়ে যায়। খুব বেশি খুশকি হলে আবার কপালের উপর দিকে অথবা কপাল জুড়ে র্যাশও দেখা যায়।

খুশকি কেন হয়ঃ
চুল ঠিকমত ব্রাশ না করলে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল ঠিকঠাক হয় না। এতে স্ক্যাল্পের সেল রিনিউয়াল প্রসেস ব্যাহত হয়। ফলে স্ক্যাল্পের ত্বকে মৃত কোশ জমতে থাকে। স্ক্যাল্প যদি কোনও কারনে খুব শুষ্ক হয়ে যায়, অথবা যাদের স্ক্যাল্প এমনিতেই খুব শুষ্ক, তাদের ক্ষেত্রে ড্যানড্রফের সমস্যা বেশি হয়। শুষ্ক আবহাওয়া, বারবার তাপমাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদিও খুশকি তৈরির জন্য দায়ী। অনেকের ধারণা থাকে যে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্পের ক্ষতি হয়। কথাটা আংশিক ঠিকই। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্প ইরিটেটেড হয় এবং তা থেকে খুশকি হয়। কিন্তু তাই ভেবে যদি শ্যাম্পু খুব কম করা হয়, তাহলেও কিন্তু স্ক্যাল্পের ক্ষতি। এক্ষেত্রে নোংরা, তেল, মৃত কোশ স্ক্যাল্পে জমতে থাকে। ফলে অপরিস্কার স্ক্যাল্পে ড্যানড্রফের সমস্যা বেড়ে যায়। খাবারে যদি পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন বি, জ়িঙ্ক, কিছু নির্দিষ্ট ফ্যাট না থাকে তাহলেও ড্যানড্রফের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্কিন ডিজ়িজ় যেমন ম্যালেসেজ়িয়া, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, ইস্ট ইনফেকশন, একজ়িমা, সোরিয়াসিস ইত্যাদি থাকলেও খুশকি দেখা দিতে পারে।

সমাধানঃ
যাদের সমস্যা কম তাদের সমাধানও সহজ। শ্যাম্পু বদলালেই অনেক সময় পুরোপুরি সমস্যা সেরে যায়। আর যাদের সমস্যা খুব বেশি তাদের ক্ষেত্রে শুধু শ্যাম্পু বদলালেই হবে না। সঙ্গে চাই বাড়তি পরিচর্যা। শ্যাম্পু কেনার সময় তার উপাদানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। জ়িঙ্ক পাইরিথন, সেলেনিয়াম সালফাইড, কোল টার, কিটোকোনাজ়োল, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, টি-ট্রি অয়েল ইত্যাদি যুক্ত শ্যাম্পু খুশকি সারাতে কার্যকরী। সপ্তাহে তিন-চার শ্যাম্পু করলেই হবে। আজকাল বিভিন্ন স্যালঁ-তে অ্যান্টি খুশকি ট্রিটমেন্ট হয়। সেগুলো ট্রাই করতে পারেন। এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মেডিকেটেড শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওই যে বললাম, শ্যাম্পুর পাশাপাশি চাই বিশেষ যত্ন। আর সেই বিশেষ যত্ন যদি ঘরে বসে নেওয়া যায়, তাহলে আর চিন্তা কী! রান্নাঘর বা বাড়ির আনাচে-কানাচেই এমন অনেক জিনিস থাকে যা খুশকি সারাতে অব্যর্থ। শুষ্ক স্ক্যাল্প থেকে যাদের ড্যানড্রফের সমস্যা হয় তাদের জন্য রইল কিছু ঘরোয়া সমাধান।

• ১/২ কাপ উষ্ণ গরম পানিতে ১/২ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা সাধারণ ভিনেগার মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ হাল্কা হাতে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন। এরপর ভালো করে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করবেন না।

• এক বাটি জলে ২ চা-চামচ মেথি মিশিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে সেটা মিক্সারে পেস্ট করে স্কাল্পে লাগিয়ে রাখুন ৩০-৪৫ মিনিট। এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

• বেশ কয়েকটা নিমপাতা ৪-৫ গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানি ছেকে তা দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। চাইলে পাতা সমেত পানি নিয়ে পেস্ট করে মাস্কের মত স্ক্যাল্পে লাগিয়েও রাখতে পারেন। একঘন্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

• বাড়িতে ডাইনিং টেবিলে নুনের কৌটো সবারই থাকে। তবে বেশি ভাল হয় যদি এপসম সল্ট ব্যবহার করা যায়। ৩ টেবিল-চামচ নুন শুকনো অথবা সামান্য ভিজে স্ক্যাল্পে হাল্কা হাতে ঘষে নিন। ২-৩ মিনিট রেখে ভাল করে শ্যাম্পু করে নিন।

• ২ টেবিল চামচ লেবুর রস ভালে করে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে এক মিনিট রেখে দিন। আলাদা বাটিতে ১ চা-চামচ লেবুর রস নিয়ে এক কাপ জলে মিশিয়ে নিন এবং তা দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। বেশ কয়েকদিন এভাবে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।

• এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে এক চা-চামচ টি-ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন। শ্যাম্পু করার পর পুরো স্ক্যাল্পে ভালো করে স্প্রে করে হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে নিন।

• চুল ধোয়ার ১৫ মিনিট আগে স্ক্যাল্পে অ্যালোভেরা পানিতে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

• স্নান করার আগে স্ক্যাল্পে নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। নারকেল তেল খুশকি তাড়াতে খুব উপকারি।

• রসুন থেতো করে মধুর সাথে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগাতে পারেন। কিছুক্ষন রেখে ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।

• অলিভ অয়েল ও খুশকি তাড়াতে ভাল কাজ করে। ৮-১০ ফোটা তেল নিয়ে স্ক্যাল্পে হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে সারারাত রেখে দিন। সকালে শ্যাম্পু করে নিন।

• যাদের ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে এই ধরনের সমস্যা হয়, তাদের জন্যও রইল কিছু ঘরোয়া সমাধান।

• অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট ভালো করে গুঁড়ো করে শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগান। ২ মিনিট রেখে ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

• আমরা যে সাধারণ মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করি, তাও ফাঙ্গাল ইনফেকশনের থেকে হওয়া খুশকি সারাতে কার্যকরী। একভাগ মাউথওয়াশ, দু’ভাগ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন। শ্যাম্পুর পর স্ক্যাল্পে স্প্রে করে হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে ৩০ মিনিট রেখে দিন। পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

• বেকিং সোডা স্ক্রাব বা ফাঙ্গিসাইড হিসাবে খুব ভালো কাজ করে। এক উষ্ণ গরম কাপ পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ভালো করে ঝাকিয়ে নিন। বাড়িতে পুরানো শ্যাম্পুর বোতলে ভরেও ঝাকিয়ে নিতে পারেন। শ্যাম্পুর পরিবর্তে কয়েকদিন এটা ব্যবহার করুন। যদি মনে হয় চুল খুব শুষ্ক লাগছে বা শ্যাম্পু না করলে হবে না, সেক্ষেত্রে শ্যাম্পুর মধ্যেই এক চা-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ভাল করে প্লেন পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বিশেষ টিপস্ঃ
এ তো গেল ঘরোয়া সমাধান। এছাড়াও ড্যানড্রফের মোকাবিলা করতে শরীরকেও যুতসই করতে হবে তো! খাবারে রাখুন ভিটামিন বি যুক্ত খাবার, সবুজ তাজা শাক-সব্জি, লেটুস, ব্রকোলি, মাছ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি। ভাল চুল এবং স্কিনের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
দিনে ১০-১৫ মিনিট রোদে থাকুন। অতিরিক্ত রোদ চুল এবং ত্বকের ক্ষতি করে। কিন্তু একদম রোদ না লাগালে কিন্তু অতিরিক্ত তেল জমার সঙ্গে সঙ্গে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের চান্স বেড়ে যায়।
হয়তো দেখলেন কোনও একটি শ্যাম্পু আপনার জন্য খুব ভাল কাজ করছে। কিন্তু কয়েকদিন ব্যবহারের পর আস্তে আস্তে তার প্রভাব কমে গেল। আসলে শ্যাম্পুর উপকরণ গুলোর সঙ্গে আমাদের স্ক্যাল্প ধাতস্থ হয়ে গেলে তখন তা আর সেরকম এফেক্ট দেয় না। তাই প্রত্যেক মাসে বা দু-তিন মাস অন্তর শ্যাম্পু বদলে ফেলুন।
প্রত্যেক শ্যাম্পুর বোতলেই বেদ বাক্যের মত একটা কথা লেখা থাকে- ‘ল্যাদার, রিন্স, রিপিট।’ কিন্তু সত্যি করে বলুন তো সেটা আমরা ক’জন মানি? একবার শ্যাম্পু করলে চুলের উপরে থাকা ধুলো-ময়লা চলে গেলেও চুল পুরোপুরি পরিস্কার হয় না। শ্যাম্পু করার সময় হাতে সময় রাখুন এবং দু’বার শ্যাম্পু করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here