খবর৭১ঃ অনশন দেখে বারেক সাহেব আগেই ঠিক করেছিলেন একটু দেরিতে যাবেন। রাতে ক্লাব থেকে ফিরতে রাতে এমনিতেই দেরি হয়েছে। ক্লাবে আড্ডাটা জমেছিলও জম্পেশ। সকালে তাই দেরিতে উঠেছেন। আবুলের রান্নার হাত অসাধারন। বেটা জানে তার ডুবো তেলে ভাজা পরোটা বারেক সাহেবের প্রিয়। তোফা পরোটা বানিয়েছে আজ আবুল, যাকে বলে অসাধারন টাইপের অসাধারন। ভুনা মাংস আর পরোটা দিয়ে ভরপেট ‘ব্রাঞ্চ’ সেরে ঘর থেকে বের হয়েছেন বারেক সাহেব। বিকেল অব্দি অনশন করতে হবে বলে কথা! নাট্যমঞ্চে পৌছে অবশ্য বুঝলেন হাল জামানার রাজনীতিতে তিনি কতটা আনফিট। তার চেয়ে ঢের বেশি চালু লোকজন আছে দলে। এই ভর দুপুরেও অডিটোরিয়াম ফাঁকা। কিছুক্ষন পর ধীরে ধীরে ভরতে থাকে অডিটোরিয়ামের ফাঁকা সিটগুলো। তিনি এসেছেন ব্রাঞ্চ সেরে আর তারচেয়েও চালুরা একেবারে লাঞ্চ সেরে – অনশন বলে কথা!
নাট্যমঞ্চের গরমে বসে গরম গরম বক্তৃতা শুনতে শুনতে চোখের পাতা আর খুলে রাখতে পারেন না বারেক সাহেব। দুপুরে পেট ভরে ভাত খেয়ে ‘ভাতঘুম’ দেয়াটা বাঙ্গালীর প্রিয় কাজ। তার আশেপাশে অনেকেই ভাতঘুমে ব্যস্ত। ঘুমিয়ে অবশ্য শান্তি পান না বারেক সাহেব। কে কখন ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে ইজ্জতের ফালুদা বানাবে ঠিক আছে নাকি? এরমধ্যেই কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছেন খেয়াল নেই বারেক সাহেবের। হঠাৎ বিকট তালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে ধরফরিয়ে জেগে ওঠেন বারেক সাহেব। অনশন সুসম্পন্ন হয়েছে। নামকরা বুদ্ধিজীবি নামজাদা নেতাকে জুস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করাচ্ছেন। নেতাও করুণ মুখে জুস গিলছেন। আরেকটি সফল কর্মসূচী সুসম্পন্ন করার স্বস্তি সবার চোখে-মুখে। এতে কাজের কাজ কি হলো কে জানে? তবে অন্ততঃ আরেকটা কর্মসূচীতো পালন করা গেলো, আরেক দফা বুঝ দেওয়া গেলো দলের নেতা-কর্মীদের। সবচেয়ে বড় কথা আগামী দু-চারদিন টিভির টকশোগুলোতে নেতাদের চেহারা দেখানোটা হালাল করা গেলো। এইবা কম কি?
রাতে বারেক সাহেবেরও দুটো টকশো আছে। পিঠাপিঠি দুটো টকশো। কোনোমতে একটা শেষ করে পরেরটায় ছুটছেন বারেক সাহেব। ছুটছেন না বলে বরং বলা ভালো ছোটার চেষ্টা করছেন। গাড়ি আগাচ্ছে না, গড়াচ্ছে। আজ টকশোতে সরকারি দলের এক ত্যাদোড় ছোড়ার হাতে ভালোই হেনস্তা হয়েছেন বারেক সাহেব। অনএয়ারে গলা ফাটিয়ে, চেঁচিয়ে, প্রাসঙ্গিক কম আর অপ্রাসঙ্গিক বেশী বলে কোনোমতে মান-সম্মানটা নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন গাড়িতে জ্যামে বসে মনে হচ্ছে ছোড়া কথাগুলো বলছিলো কিন্তু ঠিকই।
আলোচনা হচ্ছিল অনশন নিয়ে। ‘কেনো প্রতিকী অনশন? টানা নয় কেন? কেনোইবা প্রতিকী অনশনেও দলীয় নেতাদের প্রতীকি অংশগ্রহণ?’ – এমনি হাজারো প্রশ্ন ছোড়ার। হাজার হোক এটাইতো এই মুহুর্তে তার দলের সবচেয়ে বড় দাবি। আর সেটা আদায় করতে গিয়ে অনশনের যদি এই দশা হয় তাহলে সরকারের ঘাড় মটকানোতো দূরে থাক, কেনি আঙ্গুলটাওতো ফোটানো যাবে না।
ছোড়ার একটা কথা বিশেষ করে বারেক সাহেবের খুব মনে ধরেছে। অনএয়ারে প্রতিবাদ করেছেন ঠিকই, কিন্তু নিজেই বুঝতে পারছিলেন প্রতিবাদটা একেবারেই ম্যাড়ম্যাড়ে টাইপের হয়ে গেলো। দলে যখন রাজনীতি ছিল তখনইতো দলের অফিস খুলতো রাত ন’টার পর। যাকে ঘিরে সবকিছু, যাকে দেখানোর জন্য নেতাকর্মীদের হাজারো লম্ফজম্ফ, তাদেরও সকাল হতো বিকালে। কাজেই দলের রাজনীতিতেও চালু হয়েছিল নাইট শিফট কালচার। আর এখন যখন তিনিই মাঠে নেই, তখন অনশন যে হবে প্রতীকি আর নেতারা আসবেন প্রতীকি অংশ নিতে কিংবা অনশন শেষ হওয়ার পরে, এতে অবাক হওয়ার কি আছে। ‘ঠিকইতো আছে’- ভাবেন বারেক সাহেব। ‘রাজনীতি রাজনীতির জায়গাতেই আছে’।
নাইট শিফটের রাজনীতি চলছে প্রেসক্লাবে আর নাট্যমঞ্চে। চলছে রাজনীতি ফেসবুকে। চলছে যেমন চলুক না তেমনই। অনশন হোক প্রতীকি আর জনসভা চলুক গোলটেবিলে। নাইট শিফটের রাজনীতি জিন্দাবাদ।
অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।