চৌগাছায় কাশ্মিরি আপেল কুলের চাষ করে ব্যাপক লাভের আশায় কৃষক মোশারফ

0
2128

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি ॥ যশোরের চৌগাছার কৃষক মোশারফ হোসেন কুল চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। কৃষক মোশারফ হোসেন ৩ বিঘা জমিতে কাশ্মিরি আপেল কুল, বউ সুন্দরীসহ পাঁচটি জাতের কুল চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে কুল বাজারজাত শুরু হয়েছে। তিন বিঘা জমি থেকে তিনি এক বছরে ৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন। কৃষক মোশারফ হোসেন এ অঞ্চলের একজন সেরা কৃষক হিসাবে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। প্রতি দিনই তার কুল ক্ষেতে স্থানীয়সহ আশপাশের কৃষকরা ভিড় করছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার টেংগুরপুর গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন। প্রায় এক যুগ আগে তিনি সুদুর রাজশাহী জেলা থেকে চৌগাছাতে চলে আসেন। বর্তমানে টেগুরপুর গ্রামে পাঁচ শতক জমি কিনে সেখানে বসতবাড়ি তৈরী করেছেন। মাঠে কোন জায়গা জমি নেই, অথচ এই কৃষক অন্যের জমি লিজ বর্গা নিয়ে নানা ধরনের ফসলের চাষ করে আজ স্বাবলম্বি। বর্তমান মৌসুমে তার ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল এবং ৮ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন পেয়ারা। ইতোমধ্যে কুল উঠতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে এই কৃষক ৩ বিঘা জমি থেকে ৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন। গতকাল সরেজমিন তার কুল ক্ষেতে গেলে দেখা যায় কুল উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক দম্পতি। এ সময় কথা হলে মোশারফ হোসেন জানান, ৯ মাস আগে তিনি জমিতে কুলের চারা রোপন করেন। ৬ মাস বয়স থেকে প্রতিটি গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এখন কুল পরিপূর্ণ হয়েছে তাই বাজারজাত করার জন্য কুল তুলে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিটি কাটুনে কুল ভর্তি করে তা ঢাকাতে পাঠানো হয়। এখন পাইকারী প্রতিকেজি কুল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, তিন বিঘা জমিতে ৫ জাতের কুল চাষ করেছেন। জাত গুলো হচ্ছে বউ সুন্দরী, কাশ্মিরি আপেল কুল, বল সুন্দরী, নারিকেল কুল ও দেশী আপের কুল। ১ বিঘা জমিতে তিনি ২৭৫ টি চারা রোপন করেছেন। সেনুযায়ী তিন বিঘায় ৮২৫টি চারা রোপন করেছেন। একটি চারা থেকে আর একটি চারার দুরত্ব ৫ হাত। এর সুফল হচ্ছে কুল ক্ষেত পরিচর্জায় কোন সমস্যা হয়না। সম্প্রতি তার কুল উঠা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি হয়ে গেছে। কৃষক মোশারফ হোসেনের কোন নিজস্ব জমি জায়গা নেই, তাই অন্যের জমি লিজ বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। কুলের চারা তিন চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ৬০ টাকা মুল্যে এক একটি চারা সংগ্রহ করেন। কুল চাষ করে ওই কৃষক এখন বেশ স্বাবলম্বি। তিনি জানান, কাশ্মিরি আপেল কুল দেখতে খুবই সুন্দর। এই কুলের চাষ এখনও সেভাবে বৃদ্ধি পাইনি। তাই বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের উপর লাল। স্বাদ মিষ্টি, অনেকটা বাউকুলের মতোই। তবে আপেলের থেকে কাশ্মিরি কুলের স্বাদ ভালো। তিনি জানান, সাধারণত আপেল কুল ও বাউকুল ৩০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেখানে নতুন জাতের এই সব কুল প্রথম দিকে ১শ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন জাতের এই কুল নানা রোগে আক্রান্ত হেত পারে। তবে সময় মত পরিচর্জা করলে তেমন কোন সমস্যা হয়না।
কুল মানব দেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী একটি ফল। মৌসুমি এই ফল তাই প্রতিটি মানুষের জন্য খাওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, কুলে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ আছে নানা কিছু। রোগ প্রতিরোধে যেমন ভুমিকা রাখে, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয। তবে ডায়াবেটিকের রোগীদের জন্য কুল উপকারী নই। পাকা কুলে চিনি থাকে তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা কুল না খাওয়া ভালো। কুলের উপাদান গুলো শরীরের শক্তির জোগান দেয়, অবসাদ কেটে যায় দ্রুত। কুলে আছে অ্যান্টি অক্্িরডেন্টস। এটি যকৃতে সুরক্ষা বর্ম তৈরী করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে। ত্বকের সুরক্ষায় কুল বিশেষ কাজ করে। কুল ক্ষুধাবর্ধক এবং হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। কুল একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় গঠনে এবং দাঁতের সুরক্ষায় ব্যাপক ভুমিকা রাখে। তাই মৌসুমি এই ফল পরিমান মত খাওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য উপকারী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, চৌগাছাতে নানা জাতের ফলের চাষ হচ্ছে তারমধ্যে কুল অন্যতম। কৃষি অফিস প্রতিটি কৃষককে যথাযথ ভাবে সহযোগীতা প্রদান করে যাচ্ছে। আমি আশাবাদি চৌগাছার কৃষকরা একদিন সব ধরনের ফসল উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here