মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বন্ধুদের ধর্ষণের সুযোগ না দেয়ায় প্রেমিকা সুমাকে হত্যা করে প্রেমিক। হত্যাকান্ডে সহযোগীতা করে বন্ধু জাহির’। দায় স্বীকার করে এভাবেই আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ঘাতক আলমগীর। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চুনারুঘাট থানার এস.আই জাহাঙ্গীর কবির সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে আলমগীর। ঘটনার দিন প্রেমিক আলমগীরের সাথে দেখা করতে অলিপুর আসে প্রেমিকা সুমা। এ সময় রঘুনন্দন পাহাড়ে ঘুরতে প্রলোভন দেয় আলমগীর। সরল বিশ্বাসে রাজি হয় সে। এরপর গহীন পাহাড়ে সুমাকে ধর্ষন করে আলমগীর। এক পর্যায়ে বন্ধু জাহিরকে ধর্ষনের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে অপারগতা প্রকাশ করে সুমা। শুরু হয় ধস্তা-ধস্তি। এক পর্যায়ে শাড়ির আচঁল গলায় পেছিয়ে সুমাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় আলমগীর ও তার বন্ধু জাহির।ঘাতক আলমগীর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের ডুমরা গ্রামের মীর হোসেনের পুত্র। তার দেয়া দেয়া তথ্যানুযায়ী ঘটনার সাথে জড়িত একই ইউনিয়নের আকদপুর গ্রামের মৃত ধলাই মিয়ার পুত্র জাহির মিয়া (৩৮) কে গ্রেফতার করা হয়। জাহির আলমগীরের বন্ধু। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ওসি কে.এম আজমিরুজ্জামান জানান, কললিষ্টের সূত্র ধরে বেশ কয়েকজনের নাম ইতিমধ্যেই সনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্র্থে এসব আসামীদের নাম বলা যাচ্ছেনা। হত্যার ৩৯ দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অল্প সময়ের মধ্যেই জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।উল্লেখ্য, বাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের বাদল সরকারের সাথে বিয়ে হয় সুমার। তার ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামী বাদল সরকারে সাথে বনি-বনা না হওয়ায় ৭ মাস পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পুরাসুন্দা গ্রামস্থ পিত্রালয়ে ফিরে আসে সে। এরই মাঝে সুমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে আলমগীরের। গত ৪ জানুয়ারী পিত্রালয় থেকে নিখোঁজ হয় সুমা। পরদিন ৫ জানুয়ারি চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ের মাধপুর সীমান্তবর্তী এলাকার রতনপুর কবরস্থান সংলগ্ন বেত বাগানের ভেতর থেকে সুমার লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনের ১০ দিন পর চুনারুঘাট থানায় ছবি দেখে সুমাকে সনাক্ত করেন তার পিতা। ১০ জানুয়ারি সুমার মা সন্ধ্যা রানী সরকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর আদালতের নির্দেশে সুমার লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ধর্মীয় রীতিতে সৎকার করা হয়।
হবিগঞ্জ ৩ দিনব্যাপী লোক উৎসবের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন ॥ নতুন প্রজন্মকে দেশীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে-মাহবুব আলী
মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ শহরের জালাল স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে শুরু হয়েছে ৩ দিন ব্যাপী লোক উৎসব। আর উদ্বোধনের প্রথম দিনেই হবিগঞ্জের দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে গেলেন কুষ্টিয়ার লালন কন্যারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে লোক উৎসবের উদ্বোধন করেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুবু আলী এমপি। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৩ দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম-সেবা, হবিগঞ্জ পাবলিক প্রসিকিউটর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক চৌধুরী, লোক সঙ্গীতের গবেষক নন্দ লাল শর্মা, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলের তোড়া ও উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মাহবুবু আলী এমপি বলেন, হবিগঞ্জের অতীত ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্যই এ লোক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম পুরোনো ঐতিহ্য লালনে উৎসাহিত হবে। পাশাপাশি দেশীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে সকলকে জানতে হবে। এছাড়াও আগামীতেও এরকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান। এদিকে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বানিয়াচঙ্গের কমলা রাণীর দিঘি, চুনারুঘাটের রেমা কালেঙ্গাসহ সকল দর্শনীয় স্থান আরো পর্যটনময় করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। যাতে করে জেলার সকল দর্শনীয় স্থানসহ দেশের প্রতিটি পর্যটনময় খাতের সুন্দর্য আরো বৃদ্ধি করা যায় সে লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। পর্যটন খাতকে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গড়ে তুলা হবে।আলোচনা সভাশেষে শুরু হয় সঙ্গীত পরিবেশন। বাংলা ভাষার মাস হিসেবে শুরুতেই দেশের গান পরিবেশন করেন হবিগঞ্জের কন্ঠশিল্পী আক্রাম আলী। এরপর মঞ্চে আসেন সদূর কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর শিল্পীরা। একে একে গান পরিবেশণ করে ৪ লালন কন্যা ও এক বাউল। কুষ্টিয়ার লালন কন্যারা লোক উৎসবে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন। এরপর গান পরিবেশন করেন জালালি সালমা, আধুনিক ফোক গানের স্টার বাউলা আশিক, চিশতী বাউল ও সেলিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার স্বজন নিয়ে গান উপভোগ করেন। লোক উৎসবের আজ দ্বিতীয় দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।