কাজী শাহ্ আলম,
হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি-সর্বনাশা তিস্তা নদী এখন ধু ধু বালুচর। আর এই ধু ধু বালুচরে বর্ষায় আমন ধান চাষ হয় না নদীর বন্যার কারনে। তাই আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিস্তার চরে আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছে চর এলাকার কৃষক কুল। এ এলাকার প্রধান এক মাত্র অর্থকারী ও লাভজনক ফসল হওয়ায় এ বালুচরে এবারে ব্যপকহারে চাষ হয়েছে ভুট্টা। চর অঞ্চলের জমিতে ভুট্টা ফসল লাভজনক হওয়ায় কৃষক কুল এখন ভুট্টা চাষে ঝুকে পরেছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর বিভিন্ন চর এলাকা জুরে ভুট্টা গাছে ছুয়ে গেছে মাঠ। ভুট্টা একটু দীর্ঘ্য মেয়াদি ফসল হলেও লাভ বেশি তাই আমন ধান কাটার পর থেকে আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে কৃষক কুল। আগাম জাতের ভুট্টা ক্ষেতের সবল চারা গাছ আর আবহাওয়ার আদ্রতা দেখে অধিক ফলনের স্বপ্নে কৃষকের মনে আনন্দে ভরে উঠেছে।
সোমবার উপজেলার ধুবনী গ্রামের তিস্তার চর এলাকার ভুট্টা চাষী আঃ মজিদ বলেন, নিজের জমি না থাকলেও অন্যর ৫ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে ভুট্টা আবাদ করেছি। জমির মালিককে প্রতিবিঘা জমির জন্য ৩ হাজার ৫ শত টাকা দিয়েছি। সার, বীজ ও সেচসহ সকল ব্যয় বাদ দিয়েও প্রতি বিঘা জমিতে কমহলেও ৭/৮ হাজার লাভ হবে আল্লাহর রহমতে। আগাম ভুট্টা আবাদ করলে ফলন ভাল হয় তাই আমি আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছি।
উত্তর পারুলিয়া গ্রামের শফিউল আলম রোকন’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সর্বনাশা এ তিস্তা নদীর চরে আমন ধানের আবাদ হয়না তাই আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করে সবাই। রবি মৌসুমের আবাদের টাকা দিয়ে সারা বছর পরিবারের ভরন পোষন দিতে হয়। অন্য ফসল এ চর এলাকায় আবাদ করলে ফলন ভাল হয়না এবং পরিবারের খরচ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ব্যয় করা খুবই কষ্ট হয়। তাই আমি ভাল ফলনের আশায় মৌ-সীড কোম্পানীর আগাম জাতের বিশাল-৬৪০৫ হাইব্রীড ভুট্টা বীজ ক্ষেতে বপন করেছি। ক্ষেতের সবল সুস্থ্য ভুট্টা গাছ দেখে ফলন বেশি হওয়ার আশা করছি।
একই এলাকার সুজন মিয়া জানান, আমন ধান ঘরে তোলার পর অন্য ফসল তামাক,গম চাষ করলে যে, লাভ হয় তার চেয়ে দ্বিগুন লাভ হয় ভুট্টা আবাদে। প্রতি বিঘায় ৪০ মন পর্যন্ত ভুট্টা হয় এবং ব্যয় হয় প্রতি বিঘায় ৫/৬ হাজার টাকা আর বিক্রি করি ১৫/১৮ হাজার টাকা। মাইদুল ইসলাম জানান, গত বছর উৎপাদিত ভুট্টা এখন বাজারে ভালদামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু মাত্র ভুট্টা ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সকল ভুট্টা চাষি লাভবান হবে।
সরেজমিনে,সোমবার উপজেলার ধুবনী,সির্ন্দুনা,নিজ গড্ডিমারী,হলদীবাড়ী, উত্তর পারুলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানাগেছে, এ বছর ভুট্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেরে গেছে অনেকগুন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় অধিক হারে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এছারাও আদ্রতা এবং সবল ভুট্টা গাছ দেখে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে সকলেই। পাশা পাশি দক্ষিন গড্ডিমারী এলাকার আঃ রহমান রুপম জানান, ভুট্টা লাভ জনক ফসলেই শুধু নয় দেখতেও সুন্দর এর যেমন সমাহার দেখা যায় তেমনি সবুজ রংগে ভরে গেছে মাঠ। তাই উচ্চ ফলনশীল দাদাভাই ও ৯১৮১ সহ বিভিন্ন জাতের ভুট্টা চাষ করছে সবাই। উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকার বীজ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন,সবচেয়ে বেশি মৌ-সীড কোম্পানীর ভুট্টা বীজ বিক্রি হয়েছে এবারে।
মঙ্গলবার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ উপজেলায় গত বছরে ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আর এ বছর ১২ হাজার ৮৮৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। কৃষকদেরকে ভুট্টা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং তামাক চাষ না করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি আগামীতে কৃষক সমাজ তামাক চাষ ছেড়ে দ্বিগুন হারে ভুট্টা চাষ করবে। গত বছরের তুলনায় এবারে ভুট্টা গাছে পোকার আক্রমন কম হয়েছে । আশা করা যায় আবহাওয়া ভাল থাকলে কৃষকরা এ বছর বেশি লাভবান হবে।