খবর ৭১: বিশ্বনাথ দাস: দূরের বিদ্যুতের আলো দেখে রোজ রাতে ঘুমাতে যেত বাঘা উপজেলার নিশ্চিন্তপুরের মানুষ। আশায় ছিল একদিন হয়তো এই গ্রামেও আলো জ¦লে উঠবে। আশেপাশের সব গ্রাম বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকলেও কেবল নিশ্চন্তুপুরই থাকতো অন্ধকারের অতল গহীনে। স্বাধীনতার ৪ চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষের কথা ভাবেনি কেউই।
অবশেষে তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে বর্তমান সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের ফলে আলোকিত হয়েছে গ্রামের প্রতিটি ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নির্জন রাস্তা, মসজিদ, মন্দির সহ সবখানে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ ৬ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ইতোমধ্যে রুপকল্প ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের মান সম্মত বিদ্যুৎ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎখাতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন সপÍম প বার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সহ বিভিন্ন পরিকল্পনার বাস্থবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠি বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। তারই সুফল ভোগ করছে নিশিন্তপুর মানুষ জন।
গ্রামের ছোট বড় স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের হারিকেন এবং বাতির আলোই ছিল একমাত্র ভরসা। সেই মিটিমিটি আলোর উপর ভর করেই চালিয়ে নিতে হতো পড়ালেখা থেকে শুরু করে হাতের যাবতীয় কাজ। বিদ্যুৎ না থাকায় ছিল না তথ্য প্রযুক্তির কোন ছোঁয়া এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহারও ছিল খুব সিমিত। উপজেলা সদর থেকে স্বল্প দূরত্বের এ গ্রামটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় আধুনিক ডিজিটাল সেবা থেকে অকেনটাই বি ত থাকতে হতো সব সময়।
বিদ্যুতায়নের ফলে যেমন আলোকিত হয়েছে গ্রামের প্রতিটি ঘর তেমনি কৃষি কাজে এসেছে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা। সকাল কিংবা রাত যেকোন সময় বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প ব্যবহার করে মাছ চাষ এবং জমিতে সেচ প্রদানের মাধ্যমে খুলেছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। বেকারত্ব ঘুঁচেছে এ গ্রামের অনেক যুবকের। বলছিলেন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র সোহান আহম্মেদ। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রামে এখন কম্পিউটার এর দোকান দিয়েছে। সেখানে তিনি গান লোড ও ফ্লেক্সিলোড এর ব্যবসা করছে। এখন তার পড়াশোনার খরচ ভালভাবে চালাতে পারছেন। একই গ্রামের রাশিদা পারভিন রুমা বলছিলেন সংসারে স্বামীর পাশাপাশি আমি সেলাই মেশিনের কাজ করতাম। কিন্তু সারাদিনে যা কাজ করি তাতে খুব বেশি কাজ আগাতে পারতাম না। এখন গ্রামে বিদ্যুৎ এর আলো আসায় দিন রাত পরিশ্রম করে স্বাভাবিক ভাবে সংসার চালাতে পারছি।
বিদ্যুৎ না থাকায় কতই না ভোগান্তি পোহাতে হত আমাদের বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। একই গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম। তিনি বলেন এক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় পাশ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে মোবাইল ফোন এবং টর্চ লাইট চার্জ করে নিয়ে আসতে হতো। অনেক সময় কটুকথাও শুনতে হতো কিন্তু কোন উপায় ছিল না। কারণ আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। শুধু তাই নয় আমরা অন্ধকারে থাকায় ডাকাতির কারণে গ্রামে কোনো গৃহপালিত পশু পালন করতে পারতাম না। এখন আর সেই ভোগান্তি পোহাতে হয় না। শুনতে হয়না কটুকথাও।
নিশ্চন্তপুরের নয়ন চৌধুরী বলছিলেন সরকারের এ উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এখন বিদ্যুৎ এর আলোয় আলোকিত হয়েছি। ছেলেমেয়েরা বিদ্যুতের ঝলমলে আলো ও ফ্যানের বাতাসে নিশ্চিন্ত মনে লেখাপড়া করতে পারছে। ফলে আমরা নিশ্চিন্তপুরের মানুষ এখন বেশ নিশ্চিন্তে দিন কাটাতে পারছি।
লেখক: বিশ্বনাথ দাস, কমিউনিটি মিডিয়া ফেলো, রেডিও বড়াল, বাঘা-রাজশাহী