নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে বিশাল বাঁশ কেনাবেচার হাট

0
345

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের পলইডাঙ্গা গ্রামে চিত্রা নদীর পাড়ে প্রায় ১২ একর জায়গা নিয়ে বসে বিশাল বাঁশের হাট। প্রতিদিন ১৫ লাখ টাকার বাঁশ এ হাট থেকে কেনাবেচা হয়। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এই হাটে তল্লা বাঁশ, ভাল্ল বাঁশ, কুড়য়া বাঁশসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এসে এখানে জমা হয় কিন্তু বেচাকেনা হয় রোববার হাঁটের দিন। ক্রেতা বিক্রেতারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য। বেশিরভাগ বাঁশ ব্যবসায়ীরা বাঁশ আনা নেয়ার জন্য নদী পথকে বেছে নেয়, কারণ নদীপথে বাঁশ পরিবহন সময়সাপেক্ষ হলেও সহজলভ্য। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্তত ১৫ জেলায় ব্যাপারীরা এ হাট থেকে বাঁশ কিনেন। এদের মধ্যে কেউ বাঁশ কিনতে ব্যস্ত, কেউ বাঁশ ট্রলারে সাজাতে ব্যস্ত, কেউবা বাঁশের ভুর (স্তুপ) বেধে নদীতে ভাসাতে। ক্রেতারা বলেন, তারা পানের বরজে, সবজি চাষের জন্য মাচাঙ তৈরিতে, জেলেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম তৈরিতে, ঘর বানাতে ও গৃহস্থলির বিভিন্ন কাজে বাঁশ ব্যবহার করেন। এখানে নড়াইলের বিভিন্ন গ্রামসহ খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, রাজশাহী জেলাসহ দেশের অন্তত ১৫টি জেলার ক্রেতা-বিক্রেতা বাঁশ কেনাবেচা করতে আসে। হাটের দিনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাঁশ বেচাকেনা চলে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সেই বাঁশ নদী পথে জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। তবে কিছু ব্যাপারী সড়ক পথেও বাঁশ আনা নেয়া করে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে , নড়াইলের পলইডাঙ্গা,পঙ্কবিলা, সীমানন্দপুর, আউড়িয়া, ভবানিপুর, রাইখালী, দারিয়াপুর, ফেদী, চাপুলিয়া, পাইকমারি, রতডাঙ্গা, সীমাখালীসহ বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যকভাবে বাঁশের চাষ হয়। গ্রাম্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব গ্রামের বাঁশের মালিকদের কাছ থেকে বাঁশ কিনে এই হাটে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসে। এসব গ্রামের লোকেরা বাঁশ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বাঁশের ফলন ভাল হওয়ায় এবং বাঁশ চাষে কষ্ট ও বিনিয়োগ কম হওয়ায় এখানকার লোকেরা বাঁশ চাষে খুবই আগ্রহী। নড়াইলের পলইডাঙ্গা গ্রামের এই বাঁশের হাটটি এলাকার বেকারদের জন্য করে দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রতি হাটের দিন স্থানীয় অন্তত শতাধিক দিনমজুর কাজ করে। এখানে কেউ বাঁশ ট্রলারে উঠানোর কাজ করে, কেউবা করে বাঁশের ভুর (স্তুপ) সাজানোর কাজ, আবার কেউ দূর থেকে আসা বাঁশ নামানোর কাজ করে, কেউ বাঁশ বাধার কাজ করে। এ কাজ থেকে তারা দিনে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করে। দিনমজুর রহমান ফকির বলেন, আমরা এখানে ১২০ থেকে ১২৫ জন লেবার কাজ করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা এখান থেকে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা ইনকাম করি। হাটের দিন কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে এদিন আমাদের ইনকামও ভাল হয়। বাঁশ ব্যবসায়ী সলেমান শিকদার বলেন, আমার বাবা এখানে প্রায় ২০ বছর ধরে বাঁশের ব্যবসা করত এখন বাবা নেই আমি প্রায় ৬ বছর য়াবৎ এ ব্যবসা করে আসছি। সপ্তাহের সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত আমি নড়াইলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঁশ কিনে এনে রোববার হাটে বিক্রি করি। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা দিয়ে এই বাঁশ কিনে নিয়ে যায়। খুলনা থেকে আসা ব্যবসায়ী হোসেন ব্যাপারী বলেন, আমি ১২ বছর ধরে এই হাট থেকে পাইকারি বাঁশ কিনে ট্রলারযোগে খুলনায় নিয়ে খুচরা বিক্রি করি। প্রতিটা ট্রলারে ৩০০ থেকে ৪০০ বাঁশ পরিবহন করা যায়। পানিপথে পরিবহন করায় স্বল্প খরচে অধিক লাভ করতে পারি। আকার ভেদে প্রতিটা বাঁশ খুলনায় সর্বনিম্ন ১৭৫ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করি। হাটের ইজারাদার মো. ইনামুল বলেন, স্বল্প পরিসরে প্রায় ৩৭ -৩৮ বছর আগে এখানে বাঁশের হাট শুরু হয় এখন সেটি বিস্তৃত হয়ে খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ বাঁশের হাটে পরিণত হয়েছে। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ উপ চিন্ময় রায় বলেন, নড়াইলের মাটি বাঁশ চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশের চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাঁশের চাষ শুরু করেছে । আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here