অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে গেল আদিতমারীর হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচী

0
712

খবর৭১:আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ বিভিন্ন রাহুলগ্রাসী অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে গেল লালমনিরহাটের আদিতমারীর হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। ওই প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষক আব্দুল হাবিবের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের কথা স্বীকার করলে খোদ কর্মকর্তা নুরেলা আক্তার। আর এসব অভিযোগে ২২ জুলাই সরকারের সফল কর্মসূচী বাস্তবায়নের বিপরীতে বন্ধ ঘোষণা করে নতুন নতুন নাম যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) অফিস সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) এর অধীনে উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করণ কর্মসূচী দ্বিতীয় পর্যায় লালমনিরহাটসহ ৩৫ টি উপজেলা চলমান রয়েছে। যার ২০১৪ সালে শুরু হয়ে আগামী ২০১৯ পর্যন্ত চলবে। প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৯৪৮৭.৫৯ লক্ষ টাকা। ৩৫ টি উপজেলার ন্যায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) এ কার্যক্রম শুরু করেন। উক্ত উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে হতদরিদ্র পুরুষ/মহিলাদের কর্মসংস্থান ব্যতিক্রমধর্মী প্রশিক্ষণগুলো হল, প্রশিক্ষণ কাম প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র, টেইলারিং (সেলাই), এমব্রয়ডারী, শতরঞ্জি পাপস ও গ্রামীণ ইলেকট্রিশিয়ান।
প্রকল্প শুরুর আগে এসব প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন ভাবে আদিতমারী উপজেলা কমিটির সমন্বয়ে জরিপের মাধ্যমে ২০টি ট্রেড তালিকা করা হয়। যার প্রত্যেকটি ট্রেডে ১২ জন পুরুষ/মহিলা অংশ গ্রহন করবেন। একই সাথে ৪ ট্রেডে ৪৮ জন, ৬০ কর্মদিবস সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহন করবেন। ফলে হতদরিদ্র সদস্যর ভোটার আইডি কার্ডসহ তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এতে জনপ্রতি প্রতিদিন ২শত ৫০টাকা হিসেবে ভাতা পাবেন। আর এসুযোগ কাজে লাগিয়ে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) আদিতমারী উপজেলা অফিসের গ্রামীণ ইলেকষ্ট্রিশিয়ান প্রশিক্ষক আব্দুল হাবিব ব্যাপক নয়-ছয়ের আশ্রয় গ্রহন করেন। উপজেলা কমিটির সমন্বয়ে হতদরিদ্র সদস্যর তালিকা চুরি করেন। তিনি জনপ্রতি ২ থেকে ৪ হাজার টাকার বিনিময় নতুন নতুন পুরুষ/মহিলা সংগ্রহ করে ভোটার আইডি কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে তালিকা নাম অর্ন্তভুক্ত করেন। আর এসব অভিযোগে ২২ জুলাই সরকারের সফল কর্মসূচী বাস্তবায়নের বিপরীতে বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। ফলে নির্বাচন অফিসে ওইসব হতদরিদ্রদের নাম যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। এতে বেশকিছু ভুয়া নামের প্রমাণ মিলেছে। এবিষয়ে উপজেলার সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়নের খাতাপাড়া এলাকার হাসান মিয়া স্ত্রী মমিনা বেগম ও রবিউল ইসলামের স্ত্রী বুলবুলি জানান, পাপস তৈরি কাজের প্রশিক্ষণ দিতে তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত জন্য দুইজনের নিকট ৪ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন হাবিব। এতে একজন প্রশিক্ষণ নিলেও অপরজনের প্রশিক্ষণ শুরুতেই বন্ধ হয়েছে। ফলে তারা হতাশ। একই এলাকার জহির অালীর মেয়ে জেসমিনও বলেন একই কথা, সেলাই প্রশিক্ষণে তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত জন্য তার বাড়িতে এসে ২ হাজার টাকা নিয়েছেন ওই হাবিব। শুধু সাপ্টিবাড়ী ইউনিয়ন নয়, আব্দুল হাবিব উপজেলা ৮টি ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যা তদন্ত করলে রহ-রহ প্রমাণ পাওয়া যাবে।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) অফিসের খোদ কর্মকর্তা জানান, উক্ত আব্দুল হাবিবের বাড়ি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোয়া এলাকা। তিনি ২০১২ সালে আদিতমারী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) অফিসে যোগদানের পর থেকে এলাকার প্রভাবখাটিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাথে তার গভীর সক্ষতা থাকায় আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে একের পর এক অনিয়ম করেই চলছে। এসব ঘটনায় ইতিপূর্বে আব্দুল হাবিবকে অত্র অফিস থেকে বদলী করা হয়েছিল। এমনকি তার দুর্নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) পরিচালককে জানানো হয়েছে। এছাড়াও ইতিপূর্বে অনেক হতদরিদ্রদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়া টাকা ফেরত নিয়ে দিয়েছেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নুরেলা আক্তার।

উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষক আব্দুল হাবিব বলেন, আমি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি করিনি। স্থানীয় কতিপয় কিছু আ’লীগের লোকজন আমাকে তাদের লোকজনের নাম তালিকায় ভুক্ত করতে বাধ্য করেছেন। তারা হয়তো আমার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা পয়সা নিয়েছেন। এ জন্য আমি দায়ী নই।

আদিতমারী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নুরেলা আক্তার বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে উপজেলার দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচী ২২ জুলাই থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে আব্দুল হাবিব জড়িত রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাকে সর্তক করা হয়েছে। জরিপের বাহিরে যেসব নতুন নাম এসেছে তা নির্বাচন অফিসে মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। এতে বেশকিছু ভুয়া নামের প্রমাণ মিলেছে। ফলে সরকারের সফল কর্মসূচী বাস্তবায়নের বিপরীতে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here