অরক্ষিত ২১ লেভেলক্রসিং; বাঁশে থামে যানবাহন!

0
1387
২১ লেভেলক্রসিং অরক্ষিত বাঁশে থামে যানবাহন
অরক্ষিত রেল ক্রসিং

খবর৭১ঃ

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর ঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথে ২১টি লেভেলক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি লেভেলক্রসিংয়ে বাঁশের প্রতিবন্ধকের (ব্যারিয়ার) ওপর ভর করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। জনবল সংকট থাকায় এসব লেভেল ক্রসিংয়ে টানা ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে গেটম্যানদের। ফলে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ওই রেলপথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরেও সব জেনেও নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সৈয়দপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৪ কিলোমিটার এ রেলপথে ৩৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসবের মধ্যে বৈধ লেভেল ক্রসিং ৩৩টি, অবৈধ তিনটি। এসব বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছেন মাত্র ১২ জন। তবে অধিকাংশ লেভেলক্রসিংয়ে নেই প্রতিবন্ধক। তাই বাধ্য হয়ে গেটম্যানরা নিজ উদ্যোগে প্রতিবন্ধক হিসেবে বাঁশ ব্যবহার করে ওইসব লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেন পার করাচ্ছেন।
গত শুক্রবার সৈয়দপুরের পোড়াহাট এলাকায় ই/১২৮ নম্বর লেভেলক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, এক কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘুমটি ঘরে গেট লাগানোর জন্য লোহার কিছু অবকাঠোমো বসানো হয়েছে। কিন্তু গেট ব্যারিয়ার আর লাগানো হয়নি। দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে গেট ব্যারিয়ার ছাড়াই ওই লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করে রাজশাহী থেকে ছেড় আসা চিলাহাটিগামী আন্তঃ নগর তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এ সময় দায়িত্বরত গেটম্যান মামুনুর রশীদ করিমকে ওই লেভেল ক্রসিংয়ের এক পাশে একটি বাঁশ ফেলে, অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ঢেলাপীর- -পোড়ারহাট সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ট্রেন পার করতে দেখা যায়। এসময় জানতে চাইলে গেটম্যান মামুনুর রশীদ করিম বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে এ লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি ছাড়া এখানে আরও একজন গেটম্যান রয়েছেন। তবে তাঁদের কোনো রকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি জানিয়ে বলেন লেভেল ক্রসিংয়ে গেট না থাকায় তিনি একটি বাঁশ সংগ্রহ করে সেই বাঁশ দিয়েই সড়কের যানবাহন আটকে ট্রেন পার করছেন। স্টেশন মাস্টারের সঙ্গেও তাঁদের কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। তাঁরা আগের লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যানের সঙ্গে নিজস্ব মুঠোফোনে ট্রেনের খবর নিয়ে গেটে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ট্রেন পার করেন। অনেক সময় আগের স্টেশনের গেটম্যান মোবাইল ফোন রিসিভ না করলে, তখন লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখে লেভেল ক্রসিংয়ে বাঁশ লাগিয়ে যানবাহন যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করেন। তবে রাতের বেলা ট্রেনের আলো দেখে কিংবা হুইসেল শুনে দায়িত্ব পালন করেন।

২১ লেভেলক্রসিং অরক্ষিত বাঁশে থামে যানবাহন
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং

এ কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। সুত্র জানায়,গত ২০১৫ সালের ১৪ আগস্ট গভীররাতে পোড়াহাট এলাকার ই/১২৮ নং লেভেল ক্রসিংয়ে গেট না থাকায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে নীলফামারী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্ত নগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি লেভেল ক্রসিংয়ের ওপর সৈয়দপুর থানা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানকে সজোরে ধাক্কায় দেয়। এতে ওই পিকআপ ভ্যানটি রেলপথের পাশে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় পিকআপ ভ্যানে থাকা চার পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান।

এ দূর্ঘটনায় সৈয়দপুর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মো. ইসমাইল হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। গেটম্যান মামুন আরও জানান, স্টেশনের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময় ট্রেন আসার অনেক আগেই লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে হয়। এ নিয়ে অনেক সময় পথচারী কিংবা যানবাহন চালকদের সঙ্গে তাঁদের বাগবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে। তাছাড়া, পোড়াহাট লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। কারণ এ ক্রসিং দিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন ৮ ঘন্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনে এ লেভেল ক্রসিংয়ে তিন জন গেটম্যান থাকার কথা। কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র দুইজন।।

ফলে তাঁদের ১২ ঘণ্টা একটানা দায়িত্ব পালন করতে জয়। তাছাড়া তাঁদের জন্য যে ঘুমটি ঘরটি রয়েছে, সেখানে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই। ফলে রাতে ঘুৃমটি ঘরে চার্জার কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে তাঁদের অবস্থান করতে হয়। আর তাঁদের দৈনন্দিন প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হয় আশপাশের বাড়িতে গিয়ে। এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুরের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধার সাাথে। তিনি সৈয়দপুর- -চিলাহাটি রেলপথে কয়েকটি লেভেলক্রসিংয়ে বাঁশ দিয়ে যানবাহন আটকানোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই সব লেভেলক্রসিংয়ে এরই মধ্যে অবকাঠামো বসানো সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগির আধুনিক ব্যারিয়ার লাগানো হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here